গত ২ ডিসেম্বর মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতার ৩২৪ নম্বর এ-৮ ফ্ল্যাটে সুজাকে হত্যার দুই মাস ১০ দিন পর আদালতে দেওয়া এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছে মুন। এর আগে রাজশাহীতে এক ফুফাতো বোনের বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিন খুনিকে শনাক্ত করা হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর মুনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে মুন পুরো হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে। জিদান ও মামুন নামের বাকি দুই খুনি পলাতক। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।’
হত্যার পর যেভাবে পালিয়ে যায় তিন খুনি
ঘটনার দিন বিকাল ৪টার দিকে বাসায় ফেরেন সুজা। এর কিছুক্ষণ পর মুন, জিদান ও মামুন ওই বাসায় ঢোকে। তারা একসঙ্গে বসে ইয়াবা সেবনের পর সুজাকে হত্যা করে। এরপর রাত সোয়া ৮টার দিকে জিদান ও মামুন সিঁড়ি দিয়ে এবং মুন লিফটে নিচে নেমে সুজার মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে চায়। তখন দারোয়ান আবু তাহের তাকে সুজার মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বাধা দেয়। এ সময় মাইনউদ্দিন নামে সুজার এক রুমমেট বাসার সামনে গেলে সেও মুনকে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে নিষেধ করে। এ সময় মুন বলে সুজা তাকে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বলেছে। তারা সুজাকে ফোনে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করবে–এমন সময় একটি গাড়ি এলে দারোয়ান গেট খুলে দেয়। এই ফাঁকে দ্রুত পালিয়ে যায় মুন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিন বন্ধু পরদিন মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায় জিদান ও মামুনের গ্রামের বাড়ি পাবনায়। সেখানে জিদানের বাসায় মোটরসাইকেল রেখে তারা তিনজন চলে যায় কক্সবাজার। সেখানে কয়েকদিন থাকার মুন ও মামুন আবার ফিরে আসে পাবনায়। জিদান কক্সবাজার থেকে বান্দরবান গিয়ে একটি কাঠের কারখানায় চাকরি নেয়। পাবনায় মামুনকে রেখে মুন চলে যায় রাজশাহীতে। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত মুন রাজশাহীতেই আত্মগোপন করে ছিল।
যেভাবে ধরা পড়লো মুন
সংশ্লিষ্টরা জানান, সুজা হত্যার দুদিন পর তার বড় ভাই জাকির আহমেদ বাদী হয়ে কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটির থানা পুলিশের কাছ থেকে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের পল্লবী জোনাল টিমের কাছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সুজার ওই বাসা থেকে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ, দারোয়ান আবু তাহের এবং নিহত সুজার বন্ধু মাইনুদ্দিনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিন খুনিকে শনাক্ত করা হয়। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় মুনের পরিবারের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী গোয়েন্দা অনুসন্ধানের মাধ্যমে রাজশাহীতে গিয়ে গ্রেফতার করে আনা হয় মুনকে।
বাকি দুজন এখনও পলাতক
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বাকি দুজনের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘জিদান ও মামুনের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারা ঘন ঘন জায়গা বদল করছে। তাদের খুব শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে। এই দুজনকে গ্রেফতার করা গেলে দ্রুত সময়ে আদালতে মামলাটির চার্জশিটও দেওয়া হবে।’