হবিগঞ্জের তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হবিগঞ্জের তিন আসামি

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানাধীন তিন আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামিরা হলেন, মো. শফি উদ্দিন মাওলানা (৮০), মো. তাজুল ইসলাম (৮০) ও মো. জাহেদ মিয়া (৬২)। এ তিন আসামির মধ্যে আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানা এখনও পলাতক আছেন। তবে বাকি দুই আসামি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ তদন্ত সংস্থার নিজ কার্যালয়ে সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক মো. সানা উল্লাহ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

মো. সানা উল্লাহ বলেন, মামলার এ তিন আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২২ মার্চ তদন্ত শুরু হয়ে আজ বুধবার (২১ মার্চ) তদন্ত শেষ হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। একাত্তর সালে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানায় আসামিদের দ্বারা এসব অপরাধ সংগঠিত হয়। 

তিনি আরও বলেন, এ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হলেন মো. নুর হোসেন। তদন্ত শেষে মামলাটিতে মোট ২১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তিন আসামির মধ্যে মো. শফি উদ্দিন মাওলানা এখনও পলাতক। তবে আসামি মো. তাজুল ইসলাম ওরফে ফোকন এবং মো. জাহেদ মিয়া ওরফে জাহিদ মিয়াকে গত বছরের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলি হলো:

এক. ১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ২ টার সময় আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানা, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানাধীন মুড়িয়াউক গ্রামে এমএনএ মোস্তফা আলীর (আওয়ামী লীগ সমর্থক) বাড়িসহ প্রতিবেশী ১০/১২ টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে এবং গান পাউডার ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ করে বাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়।

দুই. ১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ৩ টার সময় আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানা মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানাধীন মুড়িয়াউক গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মো. ইলিয়াস কামালের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতা মো. ইদ্রিস মিয়াকে অপহরণ করে হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে একই গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য ইসমাইল মাওলানার বাড়িতে নিয়ে আটক ও নির্যাতন করে।

তিন. ১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ৩ টার সময় আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানা, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানাধীন মুড়িয়াউক গ্রামের আব্দুল জব্বারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহানকে খোঁজাখুঁজি করে কিন্তু তাকে না পেয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের বৃদ্ধ পিতা আব্দুল জব্বারকে অপহরণ করে একই গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য ইসমাইল মাওলানার বাড়িতে আটক ও নির্যাতন করে।

একইদিন বিকেলে রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিরা অপহৃত ইদ্রিস মিয়া ও আব্দুল জব্বারকে নৌকাযোগে লাখাই থানাধীন (আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানার বাড়ির কাছে) উজাদার বিলে নিয়ে উভয়কে গুলি করে হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে দেয়।