শনিবার (১৭ মার্চ) যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়ক অংশে যাত্রাবাড়ী থেকে মাতুয়াইলের ব্যস্ততম সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের অধিকাংশ স্থানে রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়কের কাজলা এলাকার বাম পাশের অংশের। রাস্তার পিচ উঠে যাওয়ায় খানাখন্দে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। আবার কোথাও কোথাও সংস্কার কাজের জন্য ফেলে রাখা যানবাহনের কারণে যানজট দেখা দিয়েছে। কোনও কোনও অংশে ঢিমে তালে চলছে সংস্কার কাজ।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এ সড়কে বিভিন্ন সময়ে গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। এতে যাত্রীরা যেমন দুর্ভোগে পড়েন, তেমনি যানবাহনের মেরামত খরচও বেড়ে যায়।
এ পথেই লেগুনা চালান হাফিজ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে প্রায় সব গাড়িতে সমস্যা হয়। এ কারণে গাড়ি মেরামতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। যাত্রীদেরও সমস্যা হয় যাতায়াতে।’
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন,‘বাসা থেকে পরিপাটি হয়ে বের হলেও অফিস পর্যন্ত পৌঁছাতে তা আর ঠিক থাকে না। কারণ, রাস্তায় এত ধুলাবালি যে এর থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই। এ কারণে প্রায় সর্দি-কাশি লেগেই থাকে। অফিস পাশে হওয়ার কারণে বাসাও পরিবর্তন করতে পারছি না।’
শুধু খানাখন্দ নয়, পুরো ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপও দেখা গেছে। এসব স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। জন্ম নিচ্ছে মশাসহ বিভিন্ন কীটপ্রতঙ্গ। ছড়াচ্ছে রোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দেখা মিলছে না। প্রতিদিন ময়লার স্তূপ বাড়তে থাকলেও সিটি করপোরেশন কোনও তদারকি করছে না।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব স্থানে রাতে ময়লা জমে। আমরা প্রতিদিন ময়লা অপসারণ করে থাকি। এরপরও যদি কোথাও ময়লার স্তূপ জমে থাকে আমরা সেগুলো অপসারণ করবো।’
ভাঙাচোরা সড়কের পাশাপাশি সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ পার্কিংয়ের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। রাস্তার ওপর আর্বজনা থাকায় যত্রতত্র প্রস্রাব করছেন ভাসমান লোকজন। ফলে দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে হাঁটতে হয় এ সড়কে। এ পথ দিয়ে নাক চেপে হেঁটে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী রফিক জামান। তিনি বলেন, ‘পাবলিক টয়লেট থাকলেও ভাসমান লোকজন রাস্তায় প্রস্রাব করছেন। দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে যেতে হয়।’
এদিকে, রাস্তা সিটি করপোরেশনের হলেও সুযোগ বুঝে পার্কিংয়ের নামে দাপটধারীদের চাঁদাবাজিও চলছে সেখানে। মূলত ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ এই কাজটি করছেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কিছু সুবিধাভোগী নেতা ও স্থানীয় থানার কিছু কর্মকর্তাও জড়িত। কিন্তু তারা এমন ভয় দেখিয়ে কাজটি করেন যে তাদের নাম মুখে আনার সাহস পায় না সেখানে গাড়ি পার্কিংকারী চালকরা। এমনই একজন চালক হচ্ছেন সোহেল মামুন। এই মাইক্রোবাস ড্রাইভার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমরা তো বিনা পয়সায় পার্কিং করি না। এ জন্য নির্দিষ্ট একটা চাঁদা পরিশোধ করতে হয়।’ তবে কারা চাঁদা নেয় এবং কত টাকা দিতে হয়, তা বলতে রাজি হননি তিনি।
এছাড়া ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে বিভিন্ন স্থানে হকাররাও বসছে যত্রতত্র। তাদের দখলে থাকে সড়কের বড় অংশ। আর তাদের অনেকেই জানিয়েছেন,এখানে বসার জন্য প্রতিদিন তাদের একটি চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। তবে এই চাঁদা কারা নেন সে তথ্য প্রকাশ করতে চাননি হকাররাও। আর এসব কারণেই গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী বিস্তৃত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে প্রতিদিন যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।