প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে নিজের নাম প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সে গাঢাকা দিয়েছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। একইভাবে উধাও রয়েছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পুলকেশ দাস বাচ্চু ও জালিয়াতির জন্য ডিভাইস সরবরাহকারী সোনালী ব্যাংকের আইটি অফিসার মোহাম্মদ কার্জন।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারীচক্রের ১০ জনকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (উত্তর)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রের হোতাদের কয়েকজনের পরিচয় বেরিয়ে আসে। যাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা আবু জাফর মজুমদারসহ তার দুই সহযোগী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পুলকেশ দাস বাচ্চু ও সোনালী ব্যাংকের আইটি অফিসার মোহাম্মদ কার্জন। এরপর থেকেই তাদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছেন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আবু জাফর মজুমদার রুবেল অনুপস্থিতির কারণ সে নিজে জানায়নি। সবশেষ গত বুধবার অফিস করেছে সে। এরপর তার সঙ্গে অফিসের সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কারও যোগাযোগ হয়নি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে আবু জাফর মজুমদারের জড়িত থাকার বিষয়ে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যান্ত আমরা কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো না। এমনও হতে পারে তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এতে জড়ানো হয়েছে।’ তবে প্রকৃত অর্থে আবু জাফর অপরাধী হয়ে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
জালিয়াতির সঙ্গে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘সে (আবু জাফর মজুমদার) ছুটি না নিয়ে অফিস থেকে অনুপস্থিত। এটা অনুমোদনবিহীন ছুটি। তার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তখনই ব্যবস্থা নেবে যখন সে দোষী সাব্যস্ত হবে।’
প্রশ্নপত্র ফাঁস করে জালিয়াতির জন্য ডিভাইস সরবরাহকারী সোনালী ব্যাংকের আইটি অফিসার মোহাম্মদ কার্জনও তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধব থেকে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানা গেছে। তার ফেসবুক আইডি ও ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রশ্নপত্র ফাঁসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক বন্ধু জানায়, কার্জন ঢাকা কলেজ থেকে গণিতে পড়াশোনা করেছে। বর্তমানে সে শ্রীমঙ্গলের সোনালী ব্যাংক শাখার আইটি অফিসার হিসেবে কর্মরত। তার বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়।
দীর্ঘদিন ধরেই জালিয়াতির জন্য স্মার্ট ডিভাইস সরবরাহের কাজ কার্জন করে আসছে বলে জানিয়েছে তার বন্ধু। তার দাবি, কার্জনের এসব অপকর্ম সম্পর্কে আগে থেকেই জানতো। কিন্তু সে নিয়োগ পরীক্ষাসহ এত বড় জালিয়াতিতে জড়িত তা তাদের জানা ছিল না। ঘটনাটি জানাজানির পর কার্জন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। তার ব্যবহৃত নম্বরগুলো ও ফেসবুক আইডি বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরাও উদ্বিগ্ন।
আবু জাফর ও কার্জনের মতো পুলকেশ দাসও গাঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (উত্তর) এডিসি গোলাম সাকলাইন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মূল হোতাদের নাম পরিচয় পেয়েছি। এরই মধ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’