রাবিতে ছাত্র রাজনীতির হালচাল: পর্ব-২

ক্যাম্পাসে ‘অস্তিত্ব’ নেই ছাত্রদল-শিবিরের









রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সাবাস বাংলাদেশ’ ভাস্কর্য (ছবি- সংগৃহীত)রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রলীগের ‘মারমুখী’ অবস্থানের কারণে দাঁড়াতে পারছে না ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। ক্যাম্পাসে দলীয় কোনও কর্মসূচিতে তাদের প্রকাশ্যে কোনও উপস্থিতি নেই। ক্যাম্পাসের বাইরে কালেভাদ্রে দুয়েকটি কর্মসূচি পালন এবং গোপনে ব্যানার-লিফলেট বিতরণ ছাড়া কোনও তৎপরতা দেখা যায় না একসময়ের প্রভাব বিস্তারকারী এ দুই ছাত্র সংগঠনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবশেষ ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ছয় সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে ইমতিয়াজ আহমেদকে সভাপতি এবং কামরুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দুই বছর মেয়াদি ওই কমিটিকে একমাসের মধ্যে ৮১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ছয় সদস্যের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১৪৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর দুই মাসের মধ্যে ঘোষণা করা হয় হল ও অনুষদ আহ্বায়ক কমিটি।
ক্যাম্পাসের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ছাত্রদলের কার্যক্রম প্রকাশ্যে একেবারে বন্ধই বলা যায়। সবশেষ ২০১৭ সালের ২১ অক্টোবর রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গোপনে ব্যানার লাগাতে এলে তাদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর বাইরে দলীয় মিছিল-মিটিং চোখে পড়ে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেও কোনও তৎপরতা নেই সংগঠনটির। নতুন কর্মী সংগ্রহ থেকে শুরু করে সাংগঠনিক কোনও কার্যক্রমও নেই। নিষ্ক্রীয় দলীয় নেতারাও। এ অবস্থায় নেতৃত্ব সংকট ও দুর্বল অবস্থানের কারণে অনেকেই ছাত্রলীগে নাম লেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ আছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সংগঠনে গতিশীলতা আনতে প্রায় একযুগ পর ২০১৪ সালে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মারমুখী অবস্থানের কারণে দাঁড়াতে পারেনি ছাত্রদল। কমিটি দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে তারা।
রাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদক জেলে। তারা সেখান থেকে আমাদের যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, বিএনপি যে কর্মসূচি দেবে, তাদের সঙ্গে কর্মসূচি পালন করতে, আমরা সেটাই করছি। তবে ক্যাম্পাসে নয়, ক্যাম্পাসের বাইরে আমরা সব কর্মসূচিই করি।’
ক্যাম্পাসে কোনও কর্মসূচি পালন করেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বর্তমান প্রশাসন আমাদের ঢোকার মতো অবস্থা রাখেনি। ক্যাম্পাসে রাকসু নেই, গণতন্ত্রের পরিবেশ নেই। ক্যাম্পাসে বাম সংগঠনরা থাকছে, কিন্তু আমাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থেকে আমাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এখন ক্যাম্পাসে ঢুকতে গেলে আমাদের হয়তো কারো প্রাণ যাবে। আমরা সেটা চাচ্ছি না।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবস্থা আরও শোচনীয়। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের চাপে কোণঠাসা সংগঠনটির রাবি শাখা। একসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শক্ত অবস্থান থাকলেও এখন ক্যাম্পাসে তাদের কোনও কর্মসূচি চোখে পড়ে না। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ক্যাম্পাসের আশপাশে খাবার বিতরণের কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া যায়।
সংগঠনটিতে কারা নেতৃত্বে আছেন তা নিয়েও সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ক্যাম্পাসে ছদ্মনামে কার্যক্রম চালায় ছাত্রশিবির। সংগঠনের পদ প্রকৃত নাম ব্যবহার না করে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি লাবিব আব্দুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক (সেক্রেটারি) নাবিল আহমেদ। প্রচার সম্পাদক সাদিক বিল্লাহ নামে একজন বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের মেইলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। মূলত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠোনোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে তাদের কার্যক্রম। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে গত ২৬ মার্চ তাদের ই-মেইল করা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।