রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদফতরের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে পড়ে আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৫টি গাড়ি। এগুলোর বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। এত গাড়ি থাকতেও অধিদফতরই গাড়ি সংকট দেখিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করে। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,পরিবেশ অধিদফতরের বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প চালু রয়েছে। এসব প্রকল্প চালু হওয়ার পর প্রতিটি প্রকল্প পরিচালক তাদের প্রকল্প শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি বরাদ্দ পান। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর গাড়িগুলো পরিবহন পুলে জমা দেওয়ার কথা। অথচ প্রকল্প পরিচালকরা পরিবহন পুলে জমা না দিয়ে পরিবেশ অধিদফতরে ফেলে চলে যান। পরে পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলো অকশনে বিক্রি করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করলেও তা শেষ হতেও লাগে দীর্ঘ সময়। ফলে ওইসব গাড়ি পরিবেশ অধিদফতরে পড়ে থাকে বছরের পর বছর।
অধিদফতরের পরিবহন পুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবেশ অধিদফতরে দুই ক্যাটাগরির গাড়ি ব্যবহৃত হয়। একটি রাজস্ব বাজেটের গাড়ি, অন্যটি প্রকল্পের গাড়ি। এছাড়া গাড়ির সংকট থাকলে রাজস্ব বাজেটের আওতায় গাড়ি ভাড়া নেওয়া যায়। এমনকি প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য যদি গাড়ি সংকট থাকে সেখানেও ব্যবহারের জন্য গাড়ি ভাড়া নেওয়া যায়।
গত সপ্তাহে পরিবেশ অধিদফতরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধিদফতরের পূর্বপাশের সীমানায় খোলা স্থানে বিভিন্ন ধরনের ১৬টি গাড়ি পড়ে আছে। ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৩০৫৬, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৪৫১৩, ঢাকা মেট্রো-ঠ-২২-১৫২৯, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-৯৫০০, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-৫৮৮০, ঢাকা মেট্রো-গ-১৫-৭৩৫০, ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৪১০৬, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-৬৪২৬, ঢাকা মেট্রো-চ-০২-১৯৮৮, ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৪২৫১, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৮৩৪২, ঢাকা মেট্রো-থ-১১-৯৫০১, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-৪৬১২, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-৪৬১৪, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৩৮৫১ এবং ঢাকা মেট্রো-ঘ-০২-১১০০ নম্বরের গাড়িগুলো বছরের পর বছর এই সীমানায় রোদ-বৃষ্টি-ঝড় সহ্য করছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান অধিদফতরের কয়েকজন চালক ও আনসার। গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু মাইক্রোবাস, হায়েস, এসইউভি মাইক্রোবাস, পিকাপ এবং একটি প্রাইভেট কার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, গাড়িগুলো যখন এখানে রাখা হয় তখন সব অকেজো ছিল না। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ভালো থাকা অবস্থাতেই গাড়িগুলো এখানে রাখা হয়। কী কারণে আর এই গাড়িগুলো ব্যবহার করা হয় না, তা তারা বলতে পারবেন না। তারা জানান, গাড়িগুলো এভাবে পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যায়। হয়তো এক অথবা দুই বছর ব্যবহার করা হয় এসব গাড়ি। আবার কোনও কোনও গাড়িতে যে একদমই সমস্যা থাকে না, তা-ও নয়। সামান্য সমস্যা হওয়ার পরে হয়তো রেখে দেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলো আর মেরামত করা হয় না।
অকেজো হয়ে পড়ে থাকা গাড়িগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাড়িগুলো আসলে নষ্ট হওয়ার পরই সেখানে রাখা হয়েছে। এগুলো অকশনে সেল দেওয়া হয়, এটা নিয়মিত করা হয়। এখনও বেশকিছু গাড়ি অকশনে সেল দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া গাড়িগুলো অকশনে তুলতে বা ব্যবহার উপযোগী করতেও বেশকিছু প্রক্রিয়া মানতে হয়, যেহেতু সেগুলো সরকারি সম্পদ।’
তিনি বলেন, ‘গাড়িগুলোর এমন অবস্থা যে তা ঠিকঠাক করে ব্যবহার করতে গেলে ওই টাকায় আরও নতুন গাড়ি কেনা যাবে। এ কারণে ওইসব গাড়ি আর ঠিক করা হয় না।’ তারপরও যেগুলো কম খরচে ঠিক করা সম্ভব, সেগুলো ঠিক করে ব্যবহার করা হয় বলে জানান তিনি।