ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘রমজানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। বিশেষ করে চুরি-ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও অজ্ঞান-মলম পার্টি প্রতিরোধে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি পোশাকি পুলিশের তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। জালনোটের কারবারিদের ধরতেও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রমজানের প্রথম দিন থেকেই সাধারণত চুরি ও ছিনতাই বেড়ে যায়। গ্রিল কাটা চোরের উৎপাত ও পথেঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনাও আগের তুলনায় বেশি ঘটে থাকে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের কাছ থেকে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে বেশি। এছাড়া ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাজনৈতিক ক্যাডার থেকে শুরু করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে-বেনামে চাঁদাবাজি করা হয়। বিভিন্ন টার্মিনালে যাত্রীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে যায় অজ্ঞান-মলম পার্টির সদস্যরা। মানুষের কাছে ঈদের কেনাকাটার জন্য নগদ টাকা থাকায় দুর্বৃত্তরা এই সময়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব প্রতিরোধের জন্য রাজধানী ঢাকার প্রতিটি এলাকায় চেকপোস্ট ও পেট্রোলিং বৃদ্ধি করা হয়েছে। চোর ও ছিনতাইকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান, ব্লকরেইড পরিচালনা করা হবে। এছাড়া জালনোট কারবারিদের ধরতেও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। চাঁদাবাজির কোনও অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে মার্কেট ও শপিংমলগুলোয় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা নজরদারি করবেন।
সূত্র জানায়, জালনোট শনাক্তের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা হবে। বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনেও ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রোধে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা কাজ করবেন। ইফতারের সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা হওয়ার সুবাধে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সেহরির সময় অনেকেই রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। তারা যেন ছিনতাইকারীদের কবলে না পড়েন সেজন্য নাইট পেট্রোল বাড়ানো হবে।
পোশাক কারখানাকেন্দ্রিক ঝামেলাও নজরদারিতে
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি পোশাক কারখানাকেন্দ্রিক ঝামেলা এড়াতে তৎপরতা শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বিশেষ করে ঈদের আগে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এতে পোশাক শ্রমিকরা রাস্তাঘাটে নেমে এসে সড়ক অবরোধের পাশাপাশি দাবি আদায়ের জন্য ভাঙচুর চালায়। এমন কোনও পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, এজন্য আগে থেকেই পুলিশ পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র নেতাদের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছে। রুগ্ন পোশাক কারখানাগুলোকে শনাক্ত করে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঝামেলা এড়ানোর চেষ্টা চলছে।
চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
রমজানের প্রথম দিন থেকেই ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করবে ডিএমপি। একইসঙ্গে কোনও ব্যবসায়ী কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে কিনা, তাও নজরদারি করবেন গোয়েন্দারা। ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ভেজালবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় কালোবাজারি ঠেকাতেও অভিযান চালানো হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা
রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা উত্তোলনের পর কেউ পুলিশি এসকর্ট চাইলে তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে। বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর এজেন্টরাও বড় অঙ্কের টাকা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার প্রয়োজন হলে পুলিশের বিশেষ এসকর্ট দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ডিএমপির কর্মকর্তারা এক দফা বৈঠক করেছেন। রমজানের মধ্যে আরেক দফা বৈঠক করে নিরাপত্তার ঘাটতিগুলো নির্ণয় করে তা পূরণ করা হবে।
জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধে কাজ করবে সিটিটিসি
এর আগে রমজান মাসেও নারকীয় জঙ্গি হামলার ঘটনা মাথায় রেখে এই সময়ে জঙ্গিরা আবারও হামলার চেষ্টা করতে পারে, এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে কাজ করবে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। যদিও সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিদের নতুন করে হামলা করার মতো সক্ষমতা এখন আর নেই। তারপরও বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যেন কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
ট্রাফিক শৃঙ্খলায় বিশেষ নির্দেশনা
রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে নগরবাসী যেন নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন, সেজন্য সড়কে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির প্রতিটি ক্রাইম ইউনিট কাজ করবে। পুরো রমজান মাসেই ইফতারের আগে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এই যানজট ঠেকাতে ট্রাফিক পুলিশদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় যেখানে-সেখানে পার্কিং, উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসে রাজধানীর কোনও সড়কে যেন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো খোঁড়াখুঁড়ির কাজ না করে, সেজন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ অন্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে পুলিশ।