রমজানুল মুবারক

মুফতি লুৎফুর রহমানরহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির সওগাত নিয়ে পবিত্র রমজান মাস আমাদের দুয়ারে উপস্থিত।  হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী, যারা এই বরকতময় মাসে সিয়াম সাধনা ও ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে নিজেদের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারবে, তারা খুবই সু-ভাগ্যবান।  আর যারা গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারবে না, তারা অধম ও চরম হতভাগ্য।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, মাঝের ১০ দিন ক্ষমার এবং শেষ ১০ দিন দোজখ থেকে মুক্তির। (বায়হাকি)
পবিত্র রমজানের দিবা-রাত্রির প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা মু’মিন বান্দাদের জন্য রহমত ও ক্ষমার দুয়ার উন্মুক্ত করে রেখেছেন।  সেহরি থেকে ইফতার, ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রতিটি প্রহরে রহমত ও ক্ষমার ঘোষণা বিদ্যমান। হজরত সালমান ফারমি (রা.) থেকে বর্ণিত নিম্নের হাদিস শরিফে এর বর্ণনা রয়েছে:

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল! তোমাদের মাঝে এমন এক মহান ও বরকতময় মাস উপস্থিত হয়েছে, যার একটি রাতের (শবে কদর) ইবাদত অন্য সময়ের হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।  আল্লাহ তায়ালা এ মাসে তোমাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ করেছেন রাত্রিকালীন ইবাদত (তারাবিহ+তাহাজ্জুদ) সওয়াবের মাধ্যম বানিয়েছেন।  এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে অন্য মাসের ফরজ আদায়ের সমপরিমাণ নেকি পাবে।  আর একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাবে।

এ মাস ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত।  এ মাস অন্যের প্রতি দয়া ও সহমর্মিতার মাস।  এ মাসে যে ব্যক্তি কোনও রোজাদারকে ইফতার করাবেন, তা তার জন্য গুনাহ ক্ষমার এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে।  যাকে ইফতার করালো তার সওয়াব হ্রাস না করে সমপরিমাণ সওয়াব যে ইফতার করালো তাকে দেওয়া হবে।

সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের সবার তো ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি কোনও রোজাদারকে একটি খেজুর অথবা একটু পানি কিংবা একটু দুগ্ধ দ্বারা ইফতার করাবে, তাকেও উক্ত সওয়াব দেওয়া হবে।  যে ব্যক্তি রমজানে নিজ অধীনস্থ ব্যক্তি ও কর্মচারীদের ওপর থেকে কাজের ভার হালকা করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং দোজখ থেকে মুক্তি দেবেন। (বায়হাকি, শুয়াবুল ইমান অধ্যায়)

রোজা আল্লাহর নিকট খুবই পছন্দনীয় ইবাদত।  রোজা এমন এক ইবাদত, যা নীরবে ও সবার অজান্তে সম্পাদন করা যায়।  কোনও ব্যক্তি রোজা পালন করছে কিনা, তা প্রকাশ না করে গোপনও রাখতে পারে। আবার অন্যের সামনে পরহেজগারি প্রকাশ করতে চাইলে রোজা না রেখেও নিজেকে রোজাদার হিসেবে প্রকাশ করার অবকাশ রয়েছে।  রোজার বিধান ও বিধিনিষেধ প্রতিপালনে আল্লাহ ও রোজাদার ব্যতীত তৃতীয় সত্তা নেই। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আদম সন্তানের বিভিন্ন নেক কাজের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়, তবে রোজা ব্যতিক্রম, রোজা আমার জন্য রাখা হয়, আমি নিজে এর প্রতিদান দিবো। (বুখারি, মুসলিম)

সিয়াম সাধনায় দেহের ওপর মনের এবং ভোগের ওপর ত্যাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।  ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে সিয়াম সাধনা মানুষের অন্তরকে পরিশোধিত করে।  এবং সকল অন্তরায় অপসারিত করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ করে দেয়।  তবে মনে রাখতে হবে, শুধু বাহ্যিক পানাহার বর্জনের মাধ্যমে উপবাস থাকার নাম প্রকৃত রোজা নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত মনমানসিকতা, কাজকর্ম ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সব ধরনের অন্যায় ও গর্হিত পথ থেকে বিরত না রাখা হবে, রোজা পূর্ণতা পাবে না– এর ফলাফল প্রতিফলিত হবে না।  এ জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যা ও অন্যায়-অপকর্ম ছাড়তে পারলো না, আল্লাহর নিকট তার ক্ষুধা পিপাসার কোনোই মূল্য নেই। (বুখারি)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের এবং বিশ্বের সকল মু’মিন নর-নারীকে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে সকল পাপাচার ও অন্যায় থেকে মুক্ত থেকে ন্যায় ও শান্তির পরিবার ও সমাজ বিনির্মাণের তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, ফয়জুল উলুম, আজিমপুর।