রোজা রাখছেন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)

নিয়মিতই রোজা রাখছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খাওয়া-দাওয়াও স্বাভাবিকভাবে করছেন। কারা কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা সেহরি ও ইফতারিও খাচ্ছেন তিনি। পায়ের সমস্যা ছাড়া বড় ধরনের কোনও শারীরিক সমস্যাও নেই তার। কারা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।


কারা সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে কারা ভবনের ডে-কেয়ার সেন্টারের দ্বিতীয়তলায় রাখা হয়েছে। খাবার-দাবার নিয়ে তার কোনও অভিযোগ নেই। কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবারই তিনি খাচ্ছেন। সেহরিতে খাবারের তালিকায় রয়েছে চিকন চালের ভাত, মাছ, মাংস ও ডিম। ইফতারের পরেও তিনি এসব খাবারই খাচ্ছেন। ইফতারের সময় ছোলা-মুড়ির পাশাপাশি পেপের জুস, ডাবের পানিসহ চাহিদা অনুযায়ী তাকে ইফতারি দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার চাহিদা অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ খাবার সরবরাহ করছেন। তবে বাইরে থেকে কারও দেওয়া খাবার তাকে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া শুয়ে, বসে, পত্রিকা পড়ে, কারারক্ষী ও ব্যক্তিগত পরিচারিকা ফাতেমার সঙ্গে আলাপ করেই বেশি সময় পার করেন তিনি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আদালতের নির্দেশে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে তার পরিচারিকা ফাতেমা অবস্থান করছেন।

কারাগারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোজা শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৭ মে) খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করেন তার চার আইনজীবী। অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওইদিন দেখা করেন। এর আগে ১৪ মে পরিবারের ছয় সদস্য খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। রোজা শুরুর পর বিএনপি নেতা কিংবা কোনও স্বজন আর দেখা করতে পারেননি। আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে পরিবারের সদস্যরা আবার দেখা করবেন বলেও জানা গেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত ১৪ মে ম্যাডামের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছেন। এরপর পরিবারের সদস্যদের দেখা করার আর কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমরা তার স্বাস্থ্যের বা শারীরিক অবস্থার কোনও খোঁজ-খবর পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, ১৪ মে পরিবারের সদস্যরা দেখা করে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন। তার বাম হাত ও বাম পা ভারি হয়ে গেছে। তিনি বাম হাতে কিছু ধরতে রাখতে পারছেন না। পায়ের ব্যথার কারণে হাঁটতে পারছেন না। আমরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাবের মহাসচিব ড. এজেডএম জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা বারবার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি জানিয়ে আসছি। এজন্য বিএনপি, পরিবার এবং তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তিনটি আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সেই আবেদনের ব্যাপারে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, খালেদা জিয়া আগের মতো রমজানেও সেহরি, ইফতারি ও রাতে স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন। তার চাহিদা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি ভালো আছেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। রায়ে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই দিন বিকালে তাকে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুজন ডেপুটি জেলার ও চারজন কারারক্ষী খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। একজন চিকিৎসক ও একজন ফার্মাসিস্ট তার নিয়মিত দেখাশোনা করছেন। যদিও বিএনপির অভিযোগ, খালেদা জিয়াকে কারাগারে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।