দেশে ফিরতে চাওয়া সাথীর ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তার স্বামী মো. আলম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী অসুস্থ। সে ফিরে আসতে চাইলে তার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করে আল মনসুর ওভারসিজ অ্যান্ড ট্রাভেলসের দালাল তারেক। তার মাধ্যমেই সৌদি আরব গেছে আমার স্ত্রী।’
বুধবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১৯ মে সাথীর কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন তারেক নামের এক দালাল। পরে টিকিটের জন্য ৬০ হাজার টাকা চান। তারেক নামের এই দালাল আমাকেও ফোনে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সাথী তাকে নির্যাতনের কথা ও টাকার জন্য চাপ দেওয়ার কথা আমাকে ইমোতে কল দিয়ে জানিয়েছে। আমি তাকে বলেছি, কাউকে যেন একটি টাকাও না দেয়। সাথী একটি ভিডিও করে তার নির্যাতনের বর্ণনা ও দালাল তারেকের টাকা দাবির কথাও জানায়।’
মানবাধিকার কর্মীর মাধ্যমে গণমাধ্যমকে পাঠানো ভিডিওতে সাথী বলেন, ‘দালালে আমাক হুমকি দিতেছে। ৫ জনকে দেশে ফিরে পাঠায় কোম্পানির লস হইছে। তুমি কাজে যাও। আমি বলিছি বাড়ি যাবো। দালাল বলতিছে, যদি না যাস তাহলে মরে গেলে যাও। বাংলাদেশ থেকে দড়ি পাঠাচ্ছি।’
সাথীকে আল মনসুর ওভারসিজ অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে সৌদি আরব পাঠানো দালাল তারেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে টাকা না নিয়ে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছে। তারা এখন কাজ না করলে এজেন্সির লোকসান হবে। তাই টিকিটের দাম চেয়েছি। আর তা না হলে তাদের চিকিৎসা করা হবে। তারা সেখানে কাজ করবে।’
সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের আল খোবার এলাকার ওই ক্যাম্প থেকে দেশে ফেরা মাজেদা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে ফিরতে চাইলে এজেন্সির দালালেরা পায়খানা বন্ধ করা দেয়। ওরা আমাদের এভাবে কষ্ট দিয়েছে। আমি ফিরে এলেও আমার মেয়েসহ আরও ৪ জনকে এভাবে নির্যাতন করছে।’ মেয়েকে দ্রুত ফেরতের দাবি জানান মাজেদা বেগম।
মাজেদা বেগম আরও জানান, বাড়ির কর্তা ও পরিবারের লোকজন নির্যাতন করে। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করানো হয় না। অনেক মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেছে। নির্যাতনে অসুস্থ হলে এজেন্সির ক্যাম্পে পাঠায় তারা। সেখান থেকে কেউ বাড়িতে যেতে চাইলে তাকে আবার নির্যাতন করা হয়।
একই অভিযোগ করেন দেশে ফেরা মুন্সিগঞ্জের পিংকী, লালবাগের কাজলসহ অন্যরা।
সম্প্রতি আল মনসুর ওভারসিজ অ্যান্ড ট্রাভেলস ৯ নারীকে সৌদি আরব পাঠায়। গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার পর গৃহকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হয়ে অসুস্থ হন ওই গৃহকর্মীরা। তাদের দু-একজনকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়। তবে তাদের চিকিৎসা শেষ না হতেই ট্রাভেল এজেন্সির নিয়ন্ত্রণে দাম্মামের আল খোবার এলাকার একটি ক্যাম্পে তাদের আটক রাখা হয়। গত শুক্রবার ওই আটকদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন।
বাকি ৪ জন গাইবান্ধার সাথী, ময়মনসিংহের ফুলপুর এলাকার মাজেদা বেগমের মেয়ে বিলকিস, নওগাঁর লতা এবং শ্যামপুর সাতক্ষীরার নুরজাহানও দেশে ফিরেছেন গতকাল বৃহস্পতিবার।