তেরো বছরের ছেলে তাহজিবের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট, জুতা এবং স্ত্রী ও নিজের জন্য ঈদের কেনাকাটা করলেন প্রাইভেট ব্যাংকের কর্মকর্তা তানজিম হাসান। শপিং মল থেকে যখন বের হতে যাবেন, তখনই ছেলের প্রশ্ন— ‘বাবা, কোথায় যাচ্ছো? আমাদের শপিং কি শেষ? তুমিতো এখনও আমার জার্সি কিনে দাওনি।’ ছেলের প্রশ্ন ও আবদার শুনে জার্সি কেনার জন্য দোকানে ঢুকলেন তানজিম হাসান। ছেলের প্রিয় ফুটবল দলের জার্সি নিয়ে বাসার পথে রওনা দিলেন তানজিম, তার স্ত্রী ও ছেলে।
রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে জার্সি কেনার ধুম চলছে মার্কেটগুলোতে। ঈদ ও বিশ্ব ফুটবলের জমকালো আসর প্রায় একই সময়ে হওয়ায় ঈদের কেনাকাটায় প্রাধান্য পাচ্ছে প্রিয় দলের জার্সি। ক্রেতাদের এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে খেলাধুলার সরঞ্জাম বিক্রির দোকানগুলোর পাশাপাশি সাধারণ পোশাকের দোকানেও ঠাঁই পেয়েছে বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া ফেভারিট দলগুলোর জার্সি।
বিশ্বের ৩২টি দেশের অংশগ্রহণে আগামী ১৪ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে বিশ্বকাপের ২১তম আসর। জার্সি বেচাকেনার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। এরপরই রয়েছে জার্মানি ও স্পেনের অবস্থান। মার্কেটগুলোতে এই বড় চার দলের জার্সি ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে পর্তুগাল ও ফ্রান্সের জার্সি। তালিকায় রয়েছে উরুগুয়ের নামও।
চার কোয়ালিটির জার্সির মধ্যে ‘সেমি থাই’ বিক্রি হচ্ছে বেশি। এছাড়া, বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ‘থাই’ জার্সি। এই দুই কোয়ালিটি ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে চায়নিজ ও দেশি জার্সি। গুলিস্তানে টুইন টাওয়ার মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা মহসিন জানান, এই মার্কেট থেকে সারাদেশে পাইকারি জার্সিসহ স্পোর্টস সরঞ্জাম বিক্রি হয়। রোজা শুরুর একমাস আগে থেকেই উপজেলা ও জেলা শহরগুলো থেকে জার্সির অর্ডার আসা শুরু হয়েছে। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার জার্সি বিক্রি হচ্ছে বেশি।’ তিনি বলেন, ‘খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে পাইকারি দামে নিয়ে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায় প্রতিটি জার্সি বিক্রি করছেন। একটু ভালো কোয়ালিটির দাম বেশি হওয়ায় চায়না ও দেশি জার্সি উপজেলা ও জেলা শহরে বিক্রি হচ্ছে বেশি।’
রাজধানীর স্টেডিয়াম মার্কেট, গুলিস্তান, টুইন টাওয়ার, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা, যমুনা ফিচার পার্কসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্পোর্টস স্টোরগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে দেশি-বিদেশি জার্সি।
গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের ‘স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড’ এর মালিক মাইনুল হক বলেন, ‘থাই কোয়ালিটির জার্সির দাম পড়বে প্রতিটি ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকা, সেমি থাই ৯০০ থেকে ১২০০ পাকা, চাইনিজ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং দেশি জার্সি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।’
টুইন টাওয়ার মার্কেট, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, একই কোয়ালিটির জার্সির দাম প্রায় কাছাকাছি। সারাদেশ থেকে আসা পাইকারি অর্ডারের জার্সি পাঠানোর কাজে ব্যস্ত এসব মার্কেটের দোকান কর্মচারিরা। গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের পাইকারি বিক্রেতা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘ঈদের আর কয়েকদিন বাকি। এদিকে, শেষ মুহূর্তে অনেক অর্ডার আসছে। সেগুলো পাঠাতেই ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে । দোকানে খুচরা বিক্রিও হচ্ছে ভালো।’
নূরজাহান মার্কেটে জার্সি কিনতে আসা দুই ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি ব্রাজিলের সমর্থন করি।আর আমার বন্ধু আর্জেন্টিনার সমর্থক। খেলা নিয়ে অনেক তর্ক- বিতর্ক হয়। অন্যান্য কেনাকাটার পাশাপাশি দুজনেই জার্সি কিনবো বলে এখানে এসেছি। বিক্রেতা দাম একটু বেশি চাচ্ছে। দামাদামি করে কিনতে হয়।’
বড়দের পাশাপাশি ছোটদের জার্সিও পাওয়া যাচ্ছে মার্কেটগুলোতে। ছোটদের জন্য একই কোয়ালিটির জার্সির দামে খুব বেশি ব্যবধান নেই বলে জানিয়েছেন নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী পারভেজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘জার্সির ক্ষেত্রে বড়-ছোট দুই ধরনের ক্রেতাই রয়েছে। সর্বোচ্চ একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা ব্যবধান হয়। এর বেশি নয়।’
মার্কেট থেকে কেনার পাশাপাশি অনলাইনেও জার্সি বিক্রি হচ্ছে বেশ। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজ (এফ-কমার্স) থেকে এসব জার্সি বিক্রি করা হচ্ছে। ‘জার্সি অ্যান্ড ফ্ল্যাগ অনলাইন শপ’ এর আব্দুল করিম পারভেজ বলেন, ‘আমি ছোট পরিসরে শুরু করেছি। কিন্তু ভালো কোয়ালিটির জার্সি দেওয়ায় ভালো সাড়া পাচ্ছি। অনলাইনে প্রতিদিনিই, ভলো অর্ডার পাচ্ছি। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও বেশি করে অনলাইন ব্যবসা প্রসার হবে।’