কিন্তু রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে ঈদে বাড়ির ফেরা মানুষদের সেরকম ভিড় নেই। পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাসড়কের অবস্থা খারাপ থাকায় বাসে বেশি যাত্রী যাচ্ছেন না। তারা ভরসা করছেন ট্রেনের ওপর। তার ওপর আবার বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তো আছেই। টিকিটপ্রতি অতিরিক্ত ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় বলে অভিযোগ অনেক যাত্রীর।
মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক হচ্ছে, চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এই সড়ক দুটির প্রায় এক-চতুর্থাংশের অবস্থা খারাপ। তাছাড়া, উত্তরাঞ্চলের ২২ জেলার ৬২ স্থানে প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়ক বিলীন হয়ে গেছে, ৬৭ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক বন্যায় তলিয়ে গেছে এবং ৫ হাজার ১১৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়। যাত্রীর তুলনায় টার্মিনালে পরিবহন শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি। বাস ছাড়ার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের একজন ওয়াসার সহকারী কর্মচারী আকাশ। তিনি আলমডাঙ্গা যাওয়ার জন্য বাস ছাড়ার অপেক্ষা করছিলেন। তার অভিযোগ, রয়েল পরিবহনে সাধারণত আলমডাঙ্গার ভাড়া ৪৫০ টাকা কিন্তু ঈদের সময় ৫৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণত বাড়ি যেতে ৪৫০ টাকা লাগে। এখন ঈদের জন্য ৫৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কিনলাম। ঈদের সময় টিকেট পাওয়া যায় না, তাই নিয়ে নিলাম।’
তবে অতিরিক্ত ভাড়ার নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন রয়েল পরিবহনের ম্যানেজার শান্ত। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য সময় আমরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম রাখি। সরকার নির্ধারিত ভাড়া আসে আলমডাঙ্গার ৫৬৬ টাকা। অন্য সময় গাড়ি খালি ছাড়তে হয় বলে ৪৫০ এমনকি ৪০০ টাকায় টিকিট বিক্রি করে গাড়ি ছেড়ে দেই।’
চুয়াডাঙ্গাগামী পূর্বাশা পরিবহনের এসি বাসের ভাড়া ৮০০ টাকা হলেও এখন ১০০০ টাকা নিয়েছে বলে জানান বেসরকারি চাকুরিজীবী নাইম। তিনি বলেন, ‘অগ্রিম টিকেট যখন ছাড়া হয় তখন লাইনে দাঁড়িয়ে কিনেছিলাম। সাধারণত ৮০০ টাকা হয় ভাড়া। ঈদের জন্য ১০০০ টাকা নিয়েছে।’
এ বিষয়ে পূর্বাশা পরিবহনের ম্যানেজার মো. ইউসুফ আলি বলেন, ‘আমাদের একেক মডেলের গাড়ির ভাড়া একেক রকম। কোনোটার ১৩০০, কোনোটার ১৬০০।’
এদিকে, ঈদে বাস টার্মিনালে অনিয়ম তদারকির দায়িত্বে থাকা বিআরটিএর ভিজিলেন্স টিম বলছে ভিন্ন কথা। গাড়ির ভাড়া দূরত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, মডেল অনুযায়ী নয়। এসি এবং নন-এসি দুই ক্যাটাগরিতে ভাড়া নির্ধারিত। ভিজিলেন্স টিমের সদস্য এবং বিআরটিএর অফিস সহকারী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই। এখানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন এবং মোটরযান পরিদর্শক আছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। গতকাল দুটি অভিযোগ পেয়েছিলাম আমরা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের সতর্ক করে দিয়েছে।’
গাবতলীর ভিন্ন চিত্র মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে। এখানে ময়মনসিংহগামী যাত্রীর চাপ বেশি; তাই টিকিটের জন্য রয়েছে লম্বা লাইন। তবে যাত্রীদের কেউই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেনি।
মঙ্গলবার দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে এসে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আসন্ন পবিত্র ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাত্রী হয়রানিমূলক কোনও আচরণ বরদাশত করা হবে না। টার্মিনাল থেকে গাড়ির কাগজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করে গাড়ি বের করতে দেওয়া হবে। টার্মিনালে আমরা হলুদ রেখা দিয়েছি। গাড়ি হলুদ রেখা অতিক্রম করলেই তাকে অবশ্যই টার্মিনাল ছাড়তে হবে। ঢাকা শহরের প্রবেশ ও বাহির পথ যানজটমুক্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনও রকম লক্কড়-ঝক্কড় বাস রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না। লক্কড়-ঝক্কড় বাস রাস্তায় নামলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বাস ডাম্পিং করা হবে। ঈদে যানজট সহনশীল রাখতে ডিএমপির সঙ্গে সবাই সমন্বয় করে কাজ করছে।’