ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ঈদযাত্রা

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ঈদযাত্রাঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ঘরমুখো মানুষের ভিড় ততই বাড়ছে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে। বুধবার (১৩ জুন) সকাল থেকে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনেই ছিল উপচে ভিড়। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই ছাদে উঠেছেন। নীল সাগর ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহনের এমন চিত্র দেখা গেছে। ছাদে বসা কয়েকজন যাত্রী জানান, বৃষ্টি বা দুর্ভোগ যা-ই হোক বাড়িতে যেতেই হবে। ট্রেনের ভেতর কোনও জায়গা ফাঁকা না পাওয়ায়, তারা ছাদে উঠতে বাধ্য হয়েছেন।

লালমনিরহাটগামী ‘ঈদ স্পেশাল’ এবং খুলনাগামী ‘সুন্দরবন’ ট্রেন দুটি নির্ধারিত সময়ের প্রায় একঘণ্টা পরে স্টেশন ছেড়ে যায়।’ স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানালেন, ‘এক-দুইটি ট্রেন দেরিতে যেতেই পারে। যদি এমন হয় যে, সবকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে, তাহলে সিডিউল বিপর্যয় বলা যাবে।’

বুধবার সকালে কমলাপুর স্টেশনের প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেই ট্রেনের জন্য যাত্রীদেরকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তারা ট্রেন ছাড়ার অনেক আগেই স্টেশনে হাজির হয়েছেন। সবার হাতে রয়েছে ব্যাগ-লাগেজ। যাত্রীরা দীর্ঘ দুর্ভোগ ও প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে বাড়িতে ছুটছেন,আপনজনের কাছে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদআনন্দ ভাগাভাগি করবেন বলেই সবার মধ্যে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।তাই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়মোশারারফর হোসেন নামে একজন যাত্রী বলেন,  ‘সকাল ৮টা দিকে আমি কমলাপুরে এসেছি। সে সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। তা উপেক্ষা করেই আমি এসেছি। বাবা-মা’র সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করবো, এটাই আমার লক্ষ্য।’

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪ জুন যারা ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন,তারাই আজ  বাড়ি যাচ্ছেন।

গত কয়েক দিনের তুলনায় বুধবার যাত্রীদের ভিড় বেশি। আগামী কাল বৃহস্পতিবার ও তার পরের দিন শুক্রবার যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করেন স্টেশন সংশ্লিষ্টরা।

সকাল ৯টার দিকে উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ায়। ট্রেনটি থামতে না থামতেই অপেক্ষমান যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে শুরু করেন। নিমিষেই ভরে যায় পুরো ট্রেন। যাত্রীদের ভিড়ে যারা মালামাল ও শিশুদের নিয়ে নিজ নিজ আসন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি, তাদেরকে দাঁড়িয়েই যেতে হচ্ছে।

ট্রেনের কামরায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘সকাল সাতটা থেকে স্টেশনে অপেক্ষা করছি। এইমাত্র ট্রেন এসেছে, কিন্তু আসন পাইনি। দাঁড়িয়েই যেতে হবে।’

স্টেশন মাস্টার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, বুধবার মোট ৫৯টি ট্রেন কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৩টির মতো ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়িয়েছে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস। যাত্রীরা নামার আগেই একতা ট্রেনে উঠতে শুরু করে স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীরা। মুহূর্তেই ভরে ট্রেনের সব কটি কমপার্টমেন্ট। কিছুক্ষণ পরেই ট্রেনটি  কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাবে।

সবার আগে আসন পেতে হবে, তাই জানালা দিয়েই উঠে পড়াএই ট্রেনের যাত্রী আফরোজা কলি সকাল নয়টায় স্টেশনে এসেছেন। সঙ্গে তার দুই মেয়ে। আফরোজা কলি জানান, তার স্বামী গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর অফিস থাকায় আজ  তাদের সঙ্গে যেতে পারছেন না। তাই দুই মেয়েকে নিয়েই বাড়ি যাচ্ছেন তিনি। 

এদিকে, বেলা পৌনে ১২টার দিকে সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনের ছয় নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীতে ভরে যায়। উপবনেও  ছিল উপচে পড়া ভিড়। ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ যাত্রীদের আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

এদিকে, লালমনিরহাটগামী ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের প্রায় একঘণ্টা ৪৫ মিনিট দেরিতে ছেড়ে গেছে। খুলনাগামী সুন্দরবন ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের ৫০ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে।

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন। যাত্রীদের চাপ সামলাতে প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত বগি লাগানো হয়েছে। এছাড়া,যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা আছে।’

একটি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক-দুইটি ট্রেন দেরিতে যেতেই পারে। এমন যদি হয় যে, সবকটিই দেরিতে ছেড়েছে, তাহলে সিডিউল বিপর্যয় বলা যাবে।’

তিনি জানান, নীল সাগর ও তিস্তাসহ বেশ কয়েকটিতে ভিড় ছিল। ট্রেনের ছাদে যাতে কেউ ঝুঁকি নিয়ে না যান, সে জন্য তিনি সবাইকে অনুরোধ জানান।’