জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: দ্রুত শুনানি চেয়ে আবেদন করবে দুদক

৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের পর আদালতে খালেদা জিয়াআপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দ্রুত আপিল শুনানি চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামীকাল রবিবার (২৪ জুন) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে কমিশনের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত আবেদন করা হবে।

শনিবার (২৩ জুন) দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান।

খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া একটি আপিল করেছিলেন। অন্যদিকে তার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের পক্ষ থেকেও আরেকটি আপিল করা হয়। এছাড়াও এ মামলার অন্য আসামিরাও খালাস চেয়ে আপিল করেছেন। এ মামলার আপিল নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে। সে কারণেই আমরা আগামীকাল রবিবার এসব আপিলের দ্রুত শুনানি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানাবো।’

তিনি বলেন, ‘আপিল শুনানির জন্য দুদক পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত রয়েছে। আমরাও চাই দ্রুত আপিলের শুনানি শুরু হোক।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অন্য ৫ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি চার আসামি হলেন সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। পাশাপাশি ৬ আসামির প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে ওই দিন বিকালে (৮ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন সেখানেই আছেন।

রায় ঘোষণার ১১ দিন পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি (অনুলিপি) হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়।

গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে ৪ মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহমি ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের দেওয়া ওই জামিন স্থগিত চেয়ে পরদিন ১৩ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক।

হাইকোর্টের দেওয়া ওই জামিন স্থগিত চেয়ে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের শুনানি হয়। শুনানি শেষে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনাদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে) দায়ের করতে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন ১৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল আদালত। এ আদেশ অনুসারে পরের দিন ১৫ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক লিভ টু আপিল দায়ের করেন।

এ লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি হয় ১৮ মার্চ। শুনানি শেষে আবেদনের ওপর আদেশের জন্য ১৯ মার্চ দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। পরে ১৯ মার্চ আদালত লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আপিল শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করেন। এরপর আপিল শুনানি শেষে ১৬ মে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল চেয়ে করা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে নিম্ন আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া যে আপিল করেছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে তা আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। পরে এই রায়ের অনুলিপি বিচারপতিদের সই শেষে গত ১১ জুন প্রকাশিত হয়।

সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়ের নির্দেশনা অনুসারে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার দ্রুত আপিল শুনানি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।