কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা: আতঙ্কে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ঢাবিতে শনিবর আন্দোলকারীদের একজনকে মারধরকোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ওই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ঢাবির শিক্ষার্থী। এ কারণে মারধরের ঘটনায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আন্দোলনে গেলে ছাত্রলীগের নেতারা তাদের হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

শনিবার (৩০ জুন) শাহবাগে পাবলিক লাইব্রেরি ও ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের মারধর করা হয়। আন্দোলনকারীরা এ জন্য ঢাবি ছাত্রলীগকে দায়ী করছেন। এদিন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করার জন্য ঢাবি ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা।

রাস্তায় পড়ে আছেন মারধরের শিকার একজনআগামীকাল ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। তবে আগের দিনই এমন ঘটনা ঘটায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

না্ম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এ আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকে আছি। কিন্তু যেভাবে আমাদের ওপর ছাত্রলীগের নেতারা নানা রকমের চাপ সৃষ্টি করছেন, তাতে আমরা এ আন্দোলনে এখন সক্রিয় থাকতে পারছি না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে আছি। তিনি আরও বলেন, এভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালালে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। 

এ বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর এভাবে ছাত্রলীগ হামলা করলে, আমাদের মধ্যে আতঙ্কে বিরাজ করবে–এটাই স্বাভাবিক। ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে। এখন আমাদের যে কারও ওপর যেকোনও সময় চড়াও হতে পারে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এ শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হলের গেস্ট রুমে ডেকে ডেকে তারা আন্দোলনে না যাওয়ার জন্য হুঁশিয়ার করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের নিরাপদ মনে করছি না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা নিরাপত্তা দাবি করছি।   

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. আবদুর রাজ্জাক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আগের দিন ধরনের ঘটনা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনের ব্যর্থতা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানি বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে যারা এ ধরনের কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি নষ্ট করছে, তারা ঠিক করছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ বোধ করলে আমাদের জানাবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা লাগে, তা করবে।’

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। এতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর, মো. জসিম এবং আন্দোলনকারী সাদ্দাম, আতাউলসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।