রবিবার ভোরে বনানীর মহাখালী জিপি-গ/৩৩/১ নম্বর বাড়ির পেছনের গলি থেকে গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। নিহত কাজী রাশেদ বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ইউসুফ সর্দার সোহেল ওরফে সুন্দর সোহেলের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এলাকায় বেশ পরিচিত রয়েছে রাশেদের।
এই খুনের ঘটনায় সোহেলের সঙ্গে তার সহযোগী সাজু, দিপু, সাগরসহ আরও অনেকে জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাবলী আক্তার বলেন, ‘এই সোহেল আমার ভাইকে বাসা থেকে ডেকে নিতো। একটু সময়ের জন্যও তাকে বাসায় থাকতে দিতো না।’ তবে হত্যার কারণ তিনি জানাতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘এর আগেও রাশেদকে কয়েকবার মারধর করেছে সোহেল। ছোট বিষয় নিয়েও মারতো। তবে রাশেদ ভয়ে কিছু বলতো না। ওদের সঙ্গে চলাফেরা করে বলে আমাদের পরিবার অখুশি ছিল। কিন্তু ওদের ছেড়ে আসতে চাইলে সোহেল রাশেদকে হুমকি দিতো।’
সুন্দর সোহেল হিসেবে পরিচিত বনানী যুবলীগের আহ্বায়ক একটি অনলাইন পত্রিকার প্রকাশক। রেইনবো নিউজ ২৪ ডটকম নামের অনলাইন পত্রিকার অফিস মহাখালীর স্কুল রোডের জিপি গ-৩৩/১ বাড়ির তৃতীয় তলায়। সেখানেই সোহেল তার অনুসারী ও বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতো। তবে ঘটনার পর তার অফিসটি তালাবদ্ধ রয়েছে।
নিহত রাশেদের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোহেলের মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। নিহত কাজী রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে গলি থেকে উদ্ধার হওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ৪/৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
খুনের পর চারজন মরদেহ টেনে রাস্তায় নিয়ে আসে। তাদের হাত কিছু দিয়ে পেঁচানো ছিল; যা দেখতে কাপড় ও পলিথিন জাতীয় কিছুর মতো মনে হয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ যাচাই বাছাই করছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও মামলাটি ছায়াতদন্ত শুরু করেছে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সবকিছু বিবেচনায় রেখেই তদন্ত করছি। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার নেই।’
সিসি ক্যামেরার ফুটেজও যাচাই বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নিহত কাজী রাশেদের বাবার নাম আবুল হোসেন। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রাশেদ ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি মা-বাবার সঙ্গে তাদের মহাখালীর বাসায় থাকতেন। ঘটনার পর থেকে রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার সংজ্ঞাহীন। তার দুই বছরের ছেলে কাজী আরহাম হোসেন বাবা বাবা বলে কান্না করছেন।
হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে নিহতের বড় বোন বাবলী আক্তার বলেন, ‘আমরা তো আর ভাইকে ফিরে পাবো না, কিন্তু তার অবুঝ সন্তান যেন এর সুষ্ঠু বিচার পায় সেই দাবি করছি।’