জাল সনদে চাকরি করছেন ৮৪০ জন শিক্ষক

জাল সার্টিফিকেট
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ। তিনি ১৯৯৫ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করলেও ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে পাস করেছেন। সেই শিক্ষা সনদ দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিও করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তৎকালীন সময়ে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে চাকরি দেওয়া হতো বলেই ভুয়া সনদটি ধরা পড়েনি, মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তার মতো ভুয়া সনদ দেখিয়ে দেশে বর্তমানে চাকরি করছেন আরও কমপক্ষে ৮৪০ জন শিক্ষক। যারা সরকারি অনুদানভুক্ত হয়ে প্রতিমাসে সরকারি কোষাগার থেকে তুলছেন প্রায় দুই কোটি টাকা। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ)।  

জাল সনদ শনাক্তের কাজে নামা ডিআইএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, জাল সনদ শনাক্তের অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। গত বছর থেকে সর্বশেষ ৩০ জুন পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি জেলা ও বিভাগে অনুসন্ধান করে এই সনদগুলো ভুয়া বলে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের ধারণা, দেশে আরও কয়েক হাজার শিক্ষক ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরি করছেন, যা খুব দ্রুতই ধরা পড়বে বলে মনে করছেন তারা।

সূত্র বলছে, কম্পিউটার শিক্ষা, শিক্ষক নিবন্ধন, লাইব্রেরি, বিএড, এমএড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন ডিপ্লোমার ভুয়া সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে চাকরি নিয়েছেন শত শত শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, কয়েকটি চিহ্নিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া বিএড, এমএড সনদ জমা দিয়ে চাকরি করছেন তারা। শুধু শিক্ষক নিবন্ধন, কম্পিউটার, বিএড, লাইব্রেরিয়ান সার্টিফিকেটই নয়, অনেক শিক্ষকের একাডেমিক সনদও জাল বলে শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে অনেকের এইচএসসি, ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স সার্টিফিকেটও জাল বলে শনাক্ত হয়েছে। অনার্স ও মাস্টার্সের সার্টিফিকেটগুলোর বেশিরভাগই অনিয়মের অভিযোগ ওঠা কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করা। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ডিআইএ সূত্র জানিয়েছে, শনাক্ত হওয়া ৮৪০ জন জাল সার্টিফিকেটধারী শিক্ষকদের মধ্যে শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদ নিয়ে চাকরি করছেন ৫১১ জন, কম্পিউটার শিক্ষার জাল সার্টিফিকেট রয়েছে ১৯৩ জনের, বিএড ও এমএডসহ একাডেমিক জাল সার্টিফিকেট রয়েছে ৫৬ জনের এবং লাইব্রেরিসহ অন্যান্য ভুয়া সার্টিফিকেট ধরা পড়েছে ৮০ জনের।

ডিআইএ কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষক নিবন্ধনের ভুয়া সার্টিফিকেট সবচেয়ে বেশি। এছাড়া শিক্ষক নিবন্ধনের মাধ্যমে চাকরি নেওয়ার আগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যেও ভুয়া সার্টিফিকেট রয়েছে। সরকার অনুমোদিত নয় এমন কম্পিউটার ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট নিয়েও চাকরি করছেন শিক্ষকরা। যদিও নীতিমালায় এসব প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে না বলে উল্লেখ রয়েছে।

এমন আরও কয়েক হাজার শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধনসহ কম্পিউটার শিক্ষার জাল সার্টিফিকেট আছে বলে ধারণা ডিআইএ কর্মকর্তাদের।

এ ব্যাপারে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক মো. সাজ্জাত রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাল সনদ জমা দিয়ে চাকরি করছেন হাজার হাজার শিক্ষক- এমন অভিযোগ পাওয়ার পর ২০১৪ সাল থেকে আমরা শিক্ষকদের সনদ যাচাই শুরু করি। তখন থেকে এটা চলমান রয়েছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। গত বছর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮৪০ জন শিক্ষকের সনদ জাল বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে জাল সনদধারীদের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন-  ‘এমপিওভুক্তি নিয়ে প্রতারকচক্র থেকে সাবধান’