ফের অপারেশনে আসতে তৎপর ইউনাইটেড এয়ার, মন্ত্রণালয়ে বৈঠক

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ

ফের অপারেশনে আসতে তৎপর হয়ে উঠেছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। প্রয়োজনীয় মূলধন ও বিমান সংগ্রহের চেষ্টা করছে এয়ারলাইন্সটি। তবে বকেয়া মওকুফ ও ফের চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে  আবেদন করে আসছিল এয়ারলাইন্সটি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এয়ারলাইন্সটি কীভাবে ফের অপারেশনে আসতে পারে সেটি পর্যালোচনা করতে বৈঠকও করেছে মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,  ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এয়ারলাইন্সটি কীভাবে ফের অপারেশন চালু করতে পারে সে বিষয় পর্যালোচনা করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী শাহজাহান কামালের উপস্থিতিতে  মঙ্গলবার ( ৭ আগস্ট) দুপুরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সচিব মো. মহিবুল হক, অতিরিক্ত সচিব মো. ইমরান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এমনাইম হাসান, সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন্স) উইং কমান্ডার চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীর উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে এয়ারলাইন্সটির  চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, বেবিচক চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১৯৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬.৫৯  টাকা পাবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে।

বৈঠকে  এয়ারলাইন্সটির বকেয়া, মামলা, পুনরায় আসার বিষয়গুলো আলোচনা হয়। বৈঠকে বেবিচকের কাছে বকেয়া মওকুফ চায় এয়ারলাইন্সটির প্রতিনিধিরা।  এয়ারলাইন্সটি ৬টি বিমান সংগ্রহ করে ফের ফ্লাইট চালুর কথা জানায়।

সূত্র জানায়, বৈঠকে বেবিচকের পক্ষ থেকে  এয়ারলাইন্সটি  বকেয়া কবে নাগাদ পরিশোধ করবে সেটি জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া, তারা কতটি বিমান নিয়ে ফের অপারেশন করবে, কোন রুটে পরিচালনা করবে, কতজন কর্মী নিয়োগ দেবে- এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে সমাধানের জন্য  ঈদের পরে ফের বৈঠকে ব্সারও সিদ্ধান্ত হয়।   

সূত্র জানায়, শুধু বেবিচক নয় ভারত, মালায়শিয়া ও সৌদি আরবে বিভিন্ন বিমানবন্দরে বকেয়ার রয়েছে এয়ারলাইন্সটির। এমনকি এয়ারলাইন্সটির পাইলট ও কেবিন ক্রু’রা সৌদি আরবে যে হোটেলে ছিলেন সেখানেও বকেয়া রয়েছে। এসব দেশ বকেয়া আদায়ে বেবিচক ও মন্ত্রণালয়ের কাছে বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়ে জানায়। এসব বকেয়া পরিশোধের বিষয়েও এয়ারলাইন্সটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। 

সূত্র জানায়, বেবিচকের ৩৩ থেকে ৩৭তম বোর্ড সভায়  ইউনাইটেডের ফের  অপারেশন চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। এয়ারলাইন্সটিকে বিষয় পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়। তবে এয়ারলাইন্সটি বিশদ বিবরণ না দিয়ে দায়সারাভাবে পরিকল্পনা জমা দেয়।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোনও ঘোষণা না দিয়েই ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড এয়ার।  ২০০৫ সালে বেবিচকের অনুমোদন পায় এয়ারলাইন্সটি। ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ফ্লাইট অপারেশন শুরু করে  ইউনাইডেট এয়ারওয়েজ।  এই এয়ারলাইন্সের ১১টি বিমান দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বেবিচক দেশের বিমানবন্দরগুলো থেকে এয়ারলাইন্সটির বিমান সরানোর জন্যও একাধিকবার নোটিশ করে এয়ারলাইন্সটিকে। এছাড়াও মধ্য ভারতের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ এয়ারপোর্টে এয়ারলাইন্সটির একটি বিমান তিন বছর ধরে পড়ে থাকার পর সরানোর উদ্যোগ না নেওয়ায় কয়েকদিন আগে সেটিকে  রানওয়ের পার্কিংলট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

রায়পুর বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট ম্যানেজার  রাকেশ সহায় বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের  ওই বিমানটির পার্কিং ফি বাবদ এর মধ্যেই ৬০ লাখ রুপিরও বেশি বকেয়া আছে। কিন্তু বহু বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তারা ওই ফি মেটায়নি, এমনকি বিমানটি ফিরিয়ে নেওয়ারও কোনও গরজ দেখায়নি।

এ প্রসঙ্গে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী  বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত অপারেশনে ফিরে যেতে। আমাদের সঙ্গে সাধারণ  বিনিয়োগকারীরা সম্পৃক্ত। 

আজকের বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছে।  আমরা মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মতো বিশদ পরিকল্পনা জমা দেবো।

প্রসঙ্গত, কোনও পরিচালনা কার্যক্রম না থাকায় স্টক এক্সচেঞ্জে  ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামানো হয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে। ২০১০ সালে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৮২৮ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভ মাত্র ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারী ১২ দশমিক ১৮ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার।