দুই সিটির এখনও সাতটি হাটের দরপত্র চূড়ান্ত না হলেও বাকি হাটগুলোতে কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে। ঈদের বাকি এখনও আট দিন। এরই মধ্যে ইজারাদাররা হাট এলাকায় বাঁশ-খুঁটি ও তাঁবু দিয়ে ছাউনি তৈরি করে সাজিয়ে রেখেছেন। কয়েকটি হাটে পশু আনা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে থেকে কোরবানির হাটে পশু বেচাকেনা শুরু হয়। কিন্তু এবার আগেভাগেই পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজধানীতে মোট ২২টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই সিটি। এর মধ্যে দক্ষিণে ১৩টি, উত্তরে ৯টি। কিন্তু এ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে ১৪টি হাটের ইজারা। কোনও দরপত্র না পাওয়ায় ডিএসসিসি’র ৬টি হাটের ইজারা হয়নি। এ হাটগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর উত্তরের একটিতে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করেছে সংস্থাটি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার আগেই এসব পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
দক্ষিণ সিটির ইজারা না হওয়া হাটগুলো হলো—ব্রাদার্স ইউনিয়নের পাশে বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকার আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠসংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা। এসব এলাকায় ইজারা ছাড়াই অস্থায়ী হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
জানতে চাইলে হাজী শাহ আলম বলেন, ‘বালুর মাঠে প্রস্তুতি নেওয়ায় জনসাধারণের কোনও সমস্যা হবে না। এটা উন্মুক্ত জায়গা। সেজন্য সেখানে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন। তাদের সুবিধার্থে এটা করা হয়েছে।’ সিটি করপোরেশন থেকে এখনও তো হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা ঠিক। কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্য তো আমার কিছু করতে হয়।’
সরেজমিন ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পশুর হাট বসানোর জোর প্রস্তুতি চলছে। হাটের প্রধান দুই প্রবেশ গেটে দুটি বড় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। শ্রমিকরা সারি সারি করে বাঁশের খুঁটি ও তাঁবু স্থাপনের কাজ করছেন। বৃষ্টির কবল থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, ‘ছয়টি হাটে কোনও দরপত্র জমা পড়েনি। এগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চূড়ান্ত হওয়া হাটগুলোতে ঈদের দিনসহ চার দিনের জন্য হাট বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে ইজারা প্রাপ্তরা ৬-৭ দিন আগ থেকে হাটের প্রস্তুতি নিতে পারেন।’ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আগেভাগেই হাট বসানোর বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলেও জানান তিনি।
দক্ষিণের ইজারা হওয়া সাতটি হাট হলো—মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, জিগাতলার হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর সংলগ্ন খালি জায়গা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী ছাড়া কোনও হাটে এখনও কোরবানি পশু ওঠেনি। হাট প্রস্তুত করার জন্যও কাউকে এখনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে ঈদ যেহেতু নিকটে চলে এসেছে, কেউ কেউ প্রস্তুত করতে পারেন। আমরা সাধারণত সাতদিন আগে এ অনুমতি দিয়ে থাকি। তবে হাটের কারণে যদি জনসাধারণের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’
সূত্রের দাবি, বরাবরের মতো এবারও ইজারা হওয়া হাটগুলো সিন্ডিকেটের দখলে রয়েছে। দফায় দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও কাঙ্ক্ষিত দর মেলেনি। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় সবক’টি হাটেরই দরপত্র কম পড়েছে। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে সিটি করপোরেশন অনেকটা বাধ্য হয়েই কম দরে হাট ইজারা দিচ্ছে।
দুই করপোরেশনের ৮টি হাটের জন্য তিন দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও কাঙ্ক্ষিত কোনও ইজারা মূল্য পাওয়া যায়নি। ওই হাটগুলোর বিষয়ে এখনও সিটি করপোরেশন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও এসব হাট বসানোর প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। সিন্ডিকেট ধরেই নিয়েছে খাস আদায়ের জন্য তারাই হাটগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। ফলে দুই সিটি করপোরেশন গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩টি অস্থায়ী হাটের ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৫ টাকা। ডিএনসিসির সাতটি পশুর হাটের সরকারি ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৮৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৭ টাকা।
এদিকে, ঢাকার হাটগুলোতে পশু কেনাবেচার জন্য রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার খামারিরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু আনতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে কিছু কিছু গরু বিক্রিও হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন ইজারাদাররা।