রাবেয়া-রোকাইয়ার ফের অস্ত্রোপচার নভেম্বরে

মা বাবা ও বোনের সঙ্গে রাবেয়া-রোকাইয়া

জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার পরবর্তী অস্ত্রোপচার হবে নভেম্বর মাসে। শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘রাবেয়া-রোকাইয়ার আগের অস্ত্রোপচারটা সফল হয়েছে। ওদের রক্তনালী আলাদা করে পরীক্ষার পর দেখা গেছে, আলাদা আলাদাভাবে দুজনের রক্তনালী কাজ করছে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকরা আশাবাদী। আগামী নভেম্বরে তাদের পরবর্তী অস্ত্রোপচার করা হবে।’

রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা  এখন বাড়িতে আছি। গত ২৭ আগস্ট বাড়িতে এসেছি। সেন স্যার বলেছেন, আমার মেয়েদের পরবর্তী অস্ত্রোপচার অক্টোবর বা নভেম্বরের দিকে হতে পারে। ডেট হলে স্যার জানাবেন। তখন  ঢাকায় আসবো।’

তিনি বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ভালো আছে। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করছে।এখন কোনও ধরনের সমস্যা নেই।’

এবছরই প্রথমবারের মতো রাবেয়া-রোকাইয়া নিজ বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। এ নিয়ে  রফিকুল ইসলামের মনে অনেক কষ্ট ছিল। তিনি বলেন, ‘জীবনে প্রথমবার আমরা বাড়ির বাইরে ঈদ উদযাপন করেছি। আমাদের বড় মেয়ে তাসনিম ইসলাম রাফিয়া (৭) বাড়িতে ছিল।  ঈদে আমরা বাড়িতে আসবো না শুনে ও খুব কান্নাকাটি করেছিল। এখন তিন মেয়েই ভালো আছে।’

জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার মা-বাবা দুজনেই পেশায় শিক্ষক। দু’বোনের জন্মের কথা জানাতে গিয়ে মা তাসলিমা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওদের জন্ম গত বছরের ১৬ জুলাই। বিকাল চারটায় অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার পর আমাকে পুরো অজ্ঞান না করে শুধু কোমর থেকে নিচের দিকে অবশ করা হয়। ফলে আমি সবকিছু দেখতে পাচ্ছিলাম। পেট কাটার পর বাচ্চা যখন বের করা যাচ্ছিল না, তখন চিকিৎসক পেটের আরও  অংশ কেটে  বাচ্চা বের করেন। সেখানে উপস্থিত নার্স ও চিকিৎসকদের মুখ দেখে বুঝতে পারি, কিছু একটা হয়েছে। পরে যখন ট্রেতে রাখা হয় তখন দেখি, সেখানে একটি নয়, দু’টি বাচ্চা। তাদের মাথা জোড়া লাগানো।’

প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাদের মাথায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে পরীক্ষামূলক অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। এসময় তাদের রক্তনালী আলাদা করে দেখা হয়— তা সচল থাকছে কিনা। এরপর গত ১৯ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় তাদের এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়। তখনও ওই শিশুদের পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা।

এ প্রসঙ্গে ডা.সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘রাবেয়া ও রোকাইয়ার সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে একটা সার্জিক্যাল প্রসিডিওর করেছি, যেটাতে তাদের রক্তনালীগুলো আমরা ব্লক করে দিয়ে দেখলাম, একটা বন্ধ করলে অন্যগুলো চলে কিনা। দেখা গেছে, দু’টা আলাদা করলেও কোনও সমস্যা হবে না। দু’টা আলাদা করা যাবে। সুতরাং এটা একটা ভালো স্টেপ মনে হয়। আশা করছি, সাফল্যের দিকে যাবো।’

এরপর চিকিৎসকরা রাবেয়া ও রোকাইয়ার এমআরআই  করে দেখেন যে, তাদের শরীরের অবস্থা ভালো আছে। তখন তাদেরকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,  বাংলাদেশি ও হাঙ্গেরির চিকিৎসকরা যৌথভাবে শিশু দুটির পরীক্ষামূলক অস্ত্রোপচার করেন। বাংলাদেশের ডা. সামন্ত লাল সেন, ডা. আবুল কালাম আজাদ, হাঙ্গেরির দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. স্টিফেন হিউডেক এবং অ্যান্ডোস সুকেসহ মোট ২২ জন চিকিৎসক তাদের অস্ত্রোপচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার আটলংকা গ্রামে জন্ম নেওয়া রাবেয়া-রোকাইয়া, তারা আলাদা শরীর নিয়ে ভালো হয়ে উঠবে, বড় হয়ে সুন্দর ও সুখী জীবনযাপন করবে— এমনটাই আশা তাদের মা-বাবার। এই জোড়া শিশুর চিকিৎসার ব্যয় ভার বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদের সম্পূর্ণ চিকিৎসা আগামী জানুয়ারিতে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডা. সামন্ত লাল সেন।