যুক্তরাজ্যে সন্দেহ ও নেতিবাচক আচরণের শিকার বাংলাদেশিরা

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকদের কয়েকজনজঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসী ঘটনার কারণে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীরা নেতিবাচক আচরণের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশি ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছেন শ্রীলংকা, ভারত ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশরাও। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক জরিপকারী প্রতিষ্ঠান কমরেস পরিচালিত এশিয়ান নেটওয়ার্কের জরিপে এ তথ্যে উঠে এসেছে।

জরিপে যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণকারী দুই হাজার ২৬ জনের মতামত নেওয়া হয়, যাদের জন্ম ব্রিটেনে কিন্তু তারা বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ভারত ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ।

জরিপের তথ্য এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টায় দেশটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাঈমুর জাকারিয়া রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। আর সিরিয়ায় পাড়ি দেওয়া অনেক ব্রিটিশ বাংলাদেশি স্কুলছাত্রীর এখনও হদিস পায়নি তাদের পরিবার। এসব ঘটনার জেরে ব্রিটেনে নতুন করে নেতিবাচক রূপে চিত্রিত হচ্ছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা।

জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশিসহ এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন, তারা অন্যান্য নন-এশিয়ান কমিউনিটির তুলনায় খারাপ আচরণের শিকার হচ্ছেন। এদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ বলেছেন, তারা অশোভন আচরণের শিকার হচ্ছেন। ৫৩ শতাংশ মনে করেন তারা অনর্থক সন্দেহের লক্ষবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন।

ব্রিটিশ বাংলাদেশি সমাজকর্মী ও সাবেক কমিউনিস্ট নেতা নুরুর রহিম নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্রিটেনে জঙ্গিবাদের মূল হোতা পাকিস্তানিরা। কিন্তু এখন কৌশলে তারা নেপথ্যে চলে গেছে। আর ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা বলির পাঁঠা হচ্ছেন। গুটিকয়েক বাংলাদেশির কারণে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি যদি সন্দেহের শিকার হয় সেটা উদ্বেগজনক।

কমিউনিটির প্রবীণ নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, ‘এ দেশে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন বাংলাদেশিরা। এ দেশের মূলধারায় ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের অর্জন অনেক। এমন পরিস্থিতিতে গুটিকয়েক বিপথগামীর জন্য আমাদের সব অর্জন কোনোভাবেই ম্লান হয়ে যেতে পারে না। একইসঙ্গে সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে সেটি দেখা এবং পারিবারিক অনুশাসনের চর্চাও জরুরি।’ 

লন্ডনে একটি কলেজের শিক্ষক ড. রেনু লুৎফা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, টেররিস্টদের কাজ হলো সমাজকে বিভক্ত করা। এদের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নাই। একটা বাংলাদেশি গ্রুপ এদের সঙ্গে রয়েছে বলে জানা গেছে।

নেতিবাচক আচরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আমরা হেনেস্তার শিকার হচ্ছি, কিন্তু এর দায় কাউকে হুট করে দেওয়া যাবে না। আমাদেরও কিছু সামাজিক দায় রয়েছে যা পালনে আমরা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি।’