মায়ের কোলে চড়েই বিশ্ববিদ্যালয় জয় হৃদয়ের

মায়ের কোলে চড়ে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন হৃদয় সরকার (ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবি)

হাঁটতে পারেন না শারীরিক প্রতিবন্ধী হৃদয়। তার হাতের সব আঙ্গুলও ঠিকমতো কাজ করে না। এই প্রতিবন্ধিতা তার লেখাপড়ার পথে বাধা হতে পারেনি। মায়ের কোলে চড়ে তিনি স্কুলের গণ্ডি পার করেছেন, কলেজেরও। আর এবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৩৭৪০তম হয়েছেন। মায়ের কোলে চড়েই তিনি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। হৃদয়ের আশা, প্রতিবন্ধী কোটায় যেকোনও ভালো সাবজেক্টে ভর্তির সুযোগ পাবেন তিনি।

গত শুক্রবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ওয়ালে ওয়ালে ছড়িয়ে পড়তে থাকে মায়ের কোলে চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা হৃদয়ের ছবি। মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর জানা যায়, মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন হৃদয়। মেধাক্রমে ৩৭৪০তম হওয়া হৃদয়ের আশা, প্রতিবন্ধী কোটায় তিনি যে কোনও ভালো সাবজেক্টে ভর্তির সুযোগ পাবেন।

হৃদয়ের পুরো নাম হৃদয় সরকার, বাড়ি নেত্রকোনায়। হাঁটতে পারেন না হৃদয়। তাই ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দিন তাকে কোলে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন তার মা সীমা সরকার।

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে হৃদয় সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি সত্যি অনেক খুশি। যখন নবম শ্রেণিতে ছিলাম, তখন থেকে ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন দেখেছি। আজকে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এই অনুভূতি বোঝানোর ভাষা আমার নেই। আমার সফলতার পেছনে আমার বাবা-মার অনেক অবদান। আমি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’

হৃদয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল (ছবি- ফেসবুক থেকে পাওয়া)

মায়ের ভালোবাসা ও মমতার কথা জানাতে গিয়ে হৃদয় ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘মায়ের কি আর কোনও তুলনা হয়? মা আছে বলেই আমি নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ ভাবতে পারি; প্রতিবন্ধী না।' হৃদয় আরও বলেন, ‘আমার বাবা-মা অত্যন্ত খুশি হয়েছেন, তাদের কষ্ট স্বার্থক হয়েছে।’

কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কোটা সংক্রান্ত আবেদন করা আছে। আশা করি, ভালো সাবজেক্ট-ই পাবো।’

হৃদয় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন নেত্রকোনার আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজ থেকে এবং মাধ্যমিক পাস করেছেন নেত্রকোনা জিলা স্কুল থেকে। তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন জিপিএ ৪.৫০ ও মাধ্যমিকে ৪.০৬।

সীমা সরকার কাছে ছেলের সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ছেলে চান্স পাচ্ছে, এটা আমি প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না৷ খবরটা শোনার পর আমার চোখে পানি চলে এসেছিল।’

দুই ভাইয়ের মধ্যে হৃদয় বড়। ১৪ বছর বয়সী ছোট ভাই অন্তর সরকার পড়েন সপ্তম শ্রেণিতে৷ তার বাবা সমীরণ সরকার ইটভাটার শ্রমিক।