বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালের নিরাপদ নিবাস চান 'রবিনহুড'

কুকুরকে গোছল করাচ্ছেন আফজালহয়তো বড় ভবনের কোনও একটি তলায় জানালার কোঠরে একটি বিড়াল আটকে গেছে। নামতে না পেরে সেখানে বসেই মিউ মিউ কেঁদে চলেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। খবরটি কানে গেলেই উদ্ধারে ছুটে যান রবিনহুড। ঝুঁকি নিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিজের কাছেই রেখে দেন। আবার কোনও একটি কুকুর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়েছে। খবর পেয়েই ছুটে যান, সেখান থেকে তুলে নিয়ে নিজের ঘরে এনে চিকিৎসা দেন, সুস্থ করে তোলেন এবং নিজের বাড়িতেই রেখে দেন। ২০১০ সাল থেকে এভাবেই রাস্তা থেকে কুকুর-বিড়াল তুলে এনে ঘরে ঠাঁই দিয়ে যাচ্ছেন। গত ৯ বছর ধরে জমতে জমতে তার কাছে বর্তমানে ৪৮টি কুকুর ও বিড়াল রয়েছে। সংখ্যা বাড়ায় জায়গার স্বল্পতা যেমন দেখা দিয়েছে তেমনি তাদের চিকিৎসা, খাবারসহ লালন পালনে প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে আয়ের বেশিরভাগ অংশ। ফলে রবিনহুড খ্যাত মডেল ও অভিনেতা আফজাল খানের চাওয়া সব বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালের জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল। যেখানে তারা পাবে নিয়মিত চিকিৎসা ও খাবার।
অভিনেতা আফজাল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খুব ছোট বেলা থেকেই কুকুর-বিড়ালসহ সকল বোবা প্রাণীর জন্য মন কাঁদে। তারা নিরীহ। যখন দেখি মানুষ তাদের ওপর নির্মমভাবে নির্যাতন করছে তখন আমি তাদেরকে কাছে টেনে নেই। তাকে নিজের বাড়িতে এনে সেবা করি। নিজের পরিবারের সদস্যদের মত ভালোবাসি’।
দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে এভাবেই তিনি অবুঝ প্রাণী কুকুর-বিড়ালের জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার কাছে থাকা ৪৮টি প্রাণীর মধ্যে ১১টি কুকুর বাকি সব বেড়াল। এর মধ্যে প্রায় সবাই কোনও না কোনওভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। কারো চোখ নাই, কারও হাত নাই, কারো পা নাই। নিজের আয়ের বেশিরভাগ অর্থ দিয়ে এদের লালন পালন করে চলেছেন আফজাল খান। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রশংসিতও হয়েছেন।মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ কুকুরকে আদর করে দিচ্ছেন
তিনি বলেন, ‘খিলগাঁও এলাকার তিলপাপাড়ায় নিজ বাড়িতেই এসব কুকুর ও বিড়াল রেখে লালন পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু সংখ্যা বাড়তে থাকায় ছোট বাড়িতে এতগুলো ককুর-বিড়াল রাখা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, ওদের চিকিৎসা, খাওয়া-দাওয়াসহ লালনপালন করতে প্রতি মাসে খরচ হয়ে যাচ্ছে ৫০ হাজার টাকার বেশি। অভিনয় করে যা পাই তার বেশিরভাগ অংশই ওদের পেছনে খরচ করি’।
আফজাল খান বলেন, ‘বর্তমানে কুকুর বিড়ালের জন্য প্রতিমাসে প্রায় ২০০ কেজি মুরগির মাংস, ১০০ ডিম, আট কেজি চাল এবং ৬০ লিটার দুধ লাগে। এছাড়া কয়েক রকম ওষুধ ও ইনজেকশন লাগে। সকালে ডিম ও বিকালে দুধ দেওয়া হয় বেশির ভাগ দিন। আর দুপুরবেলা ও রাতে ভাতের সাথে মুরগির মাংস মিশিয়ে ওদের জন্য বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। আর খাওয়ানোর এই বিশাল দায়িত্বটা পালন করে আমার ছোটবোন রাকা। তাছাড়া আমার দিনের বেশিরভাগ সময়ই চলে যায় ওদেরকে দেখাশোনা করতে।
দঁড়ি বেয়ে ৯ তলা ভবনে বিপদে পড়া বিড়ালকে উদ্ধারে আফজাল খানসরকারি উদ্যোগে এইসব কুকুর-বিড়ালের জন্য একটি নিরাপদ নিবাসের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো প্রায় ৯ বছর ধরে নিজেই ওদেরকে নিজের পরিবারের মত ভেবেছি। আগামীতে সংখ্যা আরও বাড়বে। তখন তো আমি আমার ছোট্ট বাড়িতে ওদের জায়গা দিতে পারবো না। তাছাড়া ওদের পেছনে যত খরচ হচ্ছে আগামীতে তা আরও বাড়বে। আমার পক্ষে এরপর তা বহন করা কষ্টকর হয়ে যাবে। ফলে আমি চাই, সরকার ও কোনও সংস্থা যেন ওদের জন্য নিরাপদ কোনও নিবাসের ব্যবস্থা করেন। যেখানে থাকবে সুশৃঙ্খল আবাসিক ভবন। সেখানে ওদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকবে, ওদের খাওয়ানোর জন্য থাকবে পর্যাপ্ত বরাদ্দ।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শাফিউর রহমান এবং মো. ডেনিয়েল নামে দুই ব্যক্তি তাদের সাধ্যমত আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। কিন্তু তা দিয়ে এতগুলো প্রাণীর দেখভাল করা কঠিন। সরকার বা অন্যকোনও সংস্থার সহযোগিতা ছাড়া এদেরকে টিকিয়ে রাখা আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে’।
আফজাল খান বলেন, ‘রবিনহুড দ্যা এনিমেলস রেসকিউয়ার'নামে একটা ফেসবুক পেজ আছে আমার। আমার এই কার্যক্রমকে সাংগঠনিক রুপ দেওয়ার জন্য ‘রবিনহুড দ্যা এনিম্যাল রেসকিউয়ার’ নামে রেজিষ্ট্রেশন করেছি। আমার এই সংগঠনের লিগ্যাল এডভাইজার হিসেবে আছেন ব্যরিস্টার তানিয়া আমির, ড. ম্যকইরি ইন্টারন্যাশনাল এ্যাডভাইজার। এখন সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়ার, এইসব বেওয়ারিশ কুকুর-বেড়ালের জন্য একটি নিরাপদ নিবাসের ব্যবস্থা করতে অবকাঠামো, সঙ্গে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। যাতে আমার কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারি।’