কিডনির জন্য নয় রওশন আরার মৃত্যু সিভিয়ার সেপটিসেমিয়ায়: হারুন অর রশীদ

দুই কিডনি হারানো রওশন আারার মৃত্যুতে গঠিত তদন্ত কমিটির সংবাদ সম্মেলনঅস্ত্রোপচারের পর ২ কিডনি হারানো রোগী রওশন আরার মৃত্যু  কিডনি রোগে হয়নি বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসা অবহেলা খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘সিভিয়ার সেপিসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রওশন আরার মৃত্যু হয়েছে।’ সোমবার (৫ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, ওই রোগীর (রওশন আরা) জীবন বাঁচাতে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য পুঁজগুলো রিমুভ করার জন্য হয়তো বাম দিকের কিডনির সঙ্গে বাম কিডনি যেটা পুরোপুরি নর্মাল থাকলেও সেটা চলে আসে। এটা ডা. হাবিবুর রহমান বুঝতে পেরেছেন কিনা, আমি জানি না। ইনফেকশন সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ায় পরে তার স্ট্রোক হয়। তার মৃত্যু হয়েছে সিভিয়ার সেপটিসেমিয়ায়।’ তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল অ্যাকসিডেন্ট তো অ্যাকসিডেন্টই। আমরা তো শোক ছাড়া কিছু আর আপনাদের বলতে পারছি না। আমরা দুঃখিত, আমরা মর্মাহত।’

জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রধান বলেন, ‘এই ধরনের দুই-একটা কেস নিয়ে কোনও রিপোর্ট ইন্টারনেটে পাবলিশড হয়েছে কিনা, সেটা দেখতে গিয়ে পেয়েছি, এই ধরনের রিপোর্ট পাবলিশড হয়নি। তো ঘটনাটা কেন ঘটল? দুর্ভাগ্যজনকভাবে আল্ট্রাসনোগ্রাম যখন করা হয়, তখন পুরোপুরি সেখানে লেখা আছে, তার দুটো কিডনি। একটি কিডনি ফুলে গেছে। আর একটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তাকে যখন সিটি স্ক্যান করা হয়, তখন বলা হয় তার দুটো কিডনি একটি হাইড্রো নেফ্রোটিক, অন্যটি অলমোস্ট নরমাল। যেহেতু কিডনির ফাংশন নর্মাল ছিল। আমরাও  আশা করেছিলাম, একটি কিডনি অস্ত্রোপচার করলে রোগী সুস্থ থাকবেন। কিন্তু রোগী ইনফেকটেড ছিলেন। আগে দুই বার তার কিডনি অপারেশন হয়েছে। অপারেশনের টেবিলে তার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাই ইনফেকশনতার শরীরে ছড়িয়ে যায়। হিস্টোপ্যাথলজিতে যখন কিডনিটা পাঠানো হলো, তখন আমাদের ধারণা হলো, দুটি কিডনি থাকার পরও কিডনির নিচের দিকে কানেকটেড ছিল, যেটা আমরা মেডিক্যাল সাইন্সে বলি হর্ষ কিডনি। আমার কাছে খুব অবাক লাগছে, এটি আলট্রাসনোগ্রামে ও সিটিস্ক্যানে কেন এই হর্ষ কিডনি ডিটেক্ট করা যায়নি।  এটা নিয়ে এখনও আমরা এখনও চিন্তা ভাবনা করছি। সিটিস্ক্যানে কার সেকশন করা হয়। আমাদের ধারণা যেহেতু নিচে কার সেকশন আসেনি, সিটি স্ক্যান যে স্তরে করা হয়েছে, তাতে দুটো কিডনি নিচের যে জোড়া লাগানোটা সেটা কার সেকশনের কারণে উঠে আসেনি।’  

তদন্ত কমিটির সদস্য ডা. আমানুর রসুল বলেন, ‘আমরা দেখেছি, রোগীর বাম পাশের কিডনি ফেলা দেওয়া হয়েছে কিনা? তার দুটি কিডনিই ফেলে দেওয়া হয়েছে। ডান পাশের কিডনি যে অপসারিত হলো, এটা স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক? এই রোগীর জন্মগতভাবে কিডনি অস্বাভাবিকভাবেই তৈরি ছিল। যখন রোগীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, তখন সার্জনের উদ্দেশ্য ছিল রোগীর জীবন বাঁচানো।  কারণ কিডনি না থাকলেও সে ডায়ালাইসিস করে বেঁচে থাকবে। প্রচুর রক্তক্ষরণ ও সিভিয়ার এডিশন থাকার জন্য আমি যে জিনিসটা এনেছি, একজন সার্জন হিসেবে সেটা কিডনি কিনা, সেটা বোঝা অসম্ভব। ওই সময় সার্জন যেটা করেছে, সেটা ছাড়া উপায় ছিল না। যদি দুটি কিডনি জোড়া লাগানো থাকে, তখন সেটি চলে আসতে পারে। এই রোগীর ক্ষেত্রে সার্জনের একটাই লক্ষ্য ছিল, সেভ দ্য পেসেন্ট নট দ্য অর্গান।’ 

বিএসএমমইউ-এর প্রো-ভিসি (প্রশাসন) ডা. মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল কাউকো কোনও চেক দিয়েছেন কিনা, কোনও চুক্তি করেছেন কিনা, এটার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিতে রাজি নয়।’ তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারে ব্লিডিংয়ের সময় ব্লাড প্রেসার ড্রপ হয়। এটি হলে অনেকদিন ধরে ইউরিন সাপ্লাই হয় না। বাম কিডনি অপারেশন করতে গিয়ে ডান কিডনি অপারেশন কেন হয়েছে এই জিনিসগুলো আইনের দৃষ্টিতে কী হবে, সেই বিষয়গুলোর জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা নেবো।’

উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর রোগী রওশন আরার বাম পাশের কিডনিতে অস্ত্রোপচার করেন বিএসএমএমইউ-এর চিকিৎসকরা। পরে জানা যায়, তার ডানপাশের কিডনিটিও নেই। গত ৩১ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন রোগী রওশন আরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ২২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।