গত বছরের ৯ জানুয়ারি স্পষ্ট অক্ষরে পড়ার উপযোগী করে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন লেখার নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। ৩০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। বিএমডিসির প্রেসক্রিপশন সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘রোগীর জন্য ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) লেখা সহজবোধ্য করতে তা স্পষ্টভাবে এবং বড় হরফে (CAPITAL LETTER) লেখার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সকল নিবন্ধিত চিকিৎসকদের প্রতি এ নির্দেশনা প্রদান করে। নির্দেশনায় বলা হয়, এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে চিকিৎসকরা যেন সবসময় ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম স্পষ্টাক্ষরে ((CAPITAL LETTER) লেখেন এবং ওষুধের ব্যবহারবিধি স্পষ্ট ও বোধগম্যভাবে লিপিবদ্ধ করেন।
চিকিৎসকরা জানান, একটি প্রেসক্রিপশনে রোগীর নাম, বয়স, তারিখ, ক্ষেত্র বিশেষে শিশুদের ওজন লিখতে হয়। বামদিকে রোগীর কমেপ্লইনগুলো লিখতে হয়। এরপর চিকিৎসক রোগী পরীক্ষা করে কী কী ইনভেস্টিগেশন পেলেন সেগুলো লিখতে হয়। তারপর ডান দিকে আরএক্স চিহৃ দিয়ে ওষুধের নাম লিখতে হয় এবং নিচে চিকিৎসকের স্বাক্ষর দিতে হয়। আর ওষুধ লেখার সময় ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা ইনজেকশন এটা লিখতে হয়। এটা কত মিলি, ডোজ কতটুকু, খাওয়ার আগে না পরে তা লিখতে হয়। সেইসঙ্গে ওষুধের নামটা অবশ্যই ইংরেজিতে লিখতে হয়। কেননা, ইংরেজিতে প্রেসক্রিপশন লিখলে এটা বিশ্বের যেকোনও দেশের চিকিৎসক দেখতে পারবেন। চিকিৎসক কী পরীক্ষা করে লিখেছেন সেটাও জানা যাবে। সাময়িকভাবে যে ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়েছে তা জাস্টিফাইড কিনা তা লেখা থাকতে হবে। ইনভেস্টিগেশনগুলো লেখা থাকবে, এগুলো উল্লেখ না থাকলে অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন হবে। চিকিৎসক কেন রোগীর এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করতে দিলেন সেটার উত্তরও প্রেসক্রিপশনে পাওয়া যাবে।
তবে চিকিৎসকরা হাইকোর্টের নির্দেশনা মানছেন না। এ প্রসঙ্গে সরকার ফার্মেসির বিক্রেতা নাসিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগের চেয়ে এখন অনেক উন্নতি হয়েছে । তবে অনেক প্রেসক্রিপশন এখনও পড়া যায় না।’ যেটি পড়া যায় না সেই প্রেসক্রিপশন কি করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেটা বুঝতে পারি না সেটা ফেরত দিয়ে দিই।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেছেন, চিকিৎসকরা যে এতো চাপ নিয়ে সেবা দেন এটা পৃথিবীর আর কোথাও দেওয়া হয় না। এতো চাপের মধ্যেও ধৈর্যসহ তারা সেবা দেন। আউটডোরে যে টিকেট সেটার সাইজ কতটুকু? অথচ কত কী আমাদের লিখতে হয়। বামদিকে রোগীর সমস্যা লেখার অপশন আছে। একজন চিকিৎসকের আটটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অফিস। আউটডোর খোলা থাকে নয়টা থেকে একটা পর্যন্ত। তাহলে একজন চিকিৎসক সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় পান। এ সময় তাকে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ রোগী দেখতে হয়। যদি তিনি এক মিনিটে একজন রোগীও দেখেন তবুও তার প্রেসক্রিপশন লেখা কিভাবে সম্ভব? তাকে রোগীর কথা শুনতে হবে। রোগীর চোখ, নাক, কান বা গলা দেখতে হবে। প্রেসার দেখতে হবে। এরপর তাকে প্রেসক্রিপশন দিতে হবে। তিন ইঞ্চি কাগজের মধ্যে কীভাবে ক্যাপিটাল লেখা বা স্পষ্ট লেখা সম্ভব?’
ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন,‘ উপরের চেয়ারে বসে স্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লেখার কথা বলা খুব সহজ। তবে, বেসরকারিভাবে যারা প্র্যাকটিস করেন তাদের স্পষ্ট অক্ষরে লেখা সহজ। এখন বহির্বিভাগের সঙ্গে যদি ওই আদেশের তুলনা করেন এটা মনে হয় অন্যায় হবে। আমি বলবো, আদালতের আদেশ (নির্দেশনা) আমাদের অক্ষরে-অক্ষরে পালন করা উচিত। তবে, ল্যাবএইড বা স্কয়ারে রোগী ভর্তি হলে সেখানে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা থাকা উচিত। সরকারি হাসপাতালে এই আদেশ কিছুটা শিথিল করা উচিত বলে আমি করি।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সমস্ত চিকিৎসককে হাইকোর্টের আদেশ পালন করতে নির্দেশ দিয়েছি। অনেক চিকিৎসক, সবার তো আর খবর নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে, আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়েছি।’