অর্থনীতি ও সংস্কৃতির মানদণ্ড এক নয়





45812771_2267940826763176_7352333168587833344_n‘ঢাকা লিট ফেস্ট – ২০১৮ ‘-এর তৃতীয় ও শেষ দিন (১০ নভেম্বর) বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটোরিয়ামে দুপুরের এক সেশনে ‘ব্রেক্সিট’ প্রসঙ্গে এক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও রাজনৈতিক সাংবাদিক জেমস মিক, ভারতীয় লেখক জয়শ্রী মিসরা, কবি ও লেখক আহসান আকবার এবং জার্মান লেখক ওলগা গ্রাইজনোভা।
‘আনকুল ব্রিটানিয়া?’ শিরোনামের এ আলোচনায় সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক এড কামিং।
আলোচনার শুরুতেই সঞ্চালক এড কামিংয়ের কণ্ঠে ফুটে ওঠে ব্রেক্সিট ইস্যুতে একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে তার নিজের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির সুর। এ প্রসঙ্গে তার এক প্রশ্নের জবাবে ঔপন্যাসিক জেমস মিক বলেন, ব্রিটেনের খেটে খাওয়া মানুষের কাছে ব্রেক্সিট খুবই গ্রহণযোগ্য ঠেকেছে। কারণ, এতে করে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষদের ইংল্যান্ড থেকে চলে যেতে হবে, যা স্থানীয়দের কাজের সুযোগ যথেষ্ট প্রসারিত করবে।’ উগ্র জাতীয়তাবাদীদের বিস্তারও ব্রেক্সিটকে প্রভাবিত করেছে বলে তিনি মত দেন।
ব্রেক্সিট নিয়ে ইউরোপসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় বা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনও নেতিবাচক প্রভাব আসবে কিনা— এড কামিংয়ের এমন প্রশ্নের জবাবে কবি আহসান আকবার বলেন, ‘বাণিজ্যিক আদান-প্রদানে একটা উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও এই ইস্যুতে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে তেমন কোনও প্রভাব থাকবে না।’ ঔপন্যাসিক জে কে রাওলিং বা প্রখ্যাত ব্রিটিশ ব্যান্ডদল বিটেলসের সূত্র ধরে আহসান আরও বলেন, ‘ব্রিটেনের উন্নত সাংস্কৃতিক উপাদান যুগ যুগ ধরেই ইউরোপসহ অন্যান্য মহাদেশে বরাবরই গ্রহণযোগ্য, যা ব্রেক্সিট ইস্যুতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বা নেই বললেই চলে।’
জার্মান নাগরিক লেখক ওলগা গ্রাইজনোভা তার পরিবারসহ ব্রিটেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ব্রিটেনের ভিসা পাওয়ার তিক্ত ঘটনা স্মরণ করেন। ব্রেক্সিট এভাবেই ইংল্যান্ড ভ্রমণে আগ্রহী অন্যান্য ইউরোপীয়ানদের মনে একটা বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
প্রযুক্তির ব্যাপকতা স্মরণ করে ভারতীয় লেখক জয়শ্রী বলেন, ‘ব্রেক্সিট ইংল্যান্ডের যেকোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করলেও বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষত সিনেমা শিল্প বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আদান-প্রদানে সেরকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।’ সহজবোধ্য ইংরেজি ভাষার ব্যাপকতার দিকটি তুলে ধরে জয়শ্রী বলেন, ‘এমনকি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময়ে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে স্বাছন্দ্য বোধ করেন।’
ব্রেক্সিট সিদ্ধান্ত সর্বোপরি ব্রিটিশদের একটি পরিণত সিদ্ধান্ত কিনা— অতিথিদের উদ্দেশ্যে এড কামিংয়ের এমন এক প্রশ্নের জের ধরে জেমস মিক একটি গল্প শোনান। গল্পটি এমন: যখন ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইংল্যান্ডে ভোট অনুষ্ঠিত হয়, বিবিসিতে কর্মরত তার এক বন্ধু ইংল্যান্ডের যাবতীয় অর্থনৈতিক ফায়দা ও সাংস্কৃতিক স্বার্থে ব্রেক্সিট সমর্থনে ভোট দেন। সপ্তাহ দুয়েক পর ৫২-৪৮ শতাংশ ভোটে যখন ব্রেক্সিট জয়লাভ করে এবং তা নিয়ে ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে, মিকের সেই বন্ধু তাকে অনুতাপের সুরে জানান, আগে-পিছে ভালোভাবে না জেনে ব্রেক্সিট সমর্থন করাটা তার পরিণত বয়সের নির্ঘাত একটি অপরিণত সিদ্ধান্ত, তা তিনি হাড়ে হাড়েই উপলব্ধি করছেন।