সাহিত্যে 'মি টু' আন্দোলনের প্রভাব

ঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোন কিংবা যেকোনও ধরনের  প্রাকৃতিক দুর্যোগই হোক, সেটার স্থায়িত্ব বেশি সময় থাকে না। কিন্তু গত বছর কিছু নারী এক নতুন আন্দোলনের সৃষ্টি করেছিলেন। সেই ঝড় ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। ১৮ জন নারী ফরাসী এক আলোকচিত্রী কতৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। পরবর্তীতে এই আন্দোলনের নাম হয়েছে ‘মি টু।’

45874215_879601802429605_8071330669831127040_n
মি টু আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রূপান্তরিত হয়েছে গণ আন্দোলনে। এই ঝড়ের উত্তাপের কারণেই এই বছর সুইডিশ একাডেমি বাধ্য হয়েছে ‘সাহিত্যে নোবেল’ পুরস্কার স্থগিত করতে। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের যে কমিটি রয়েছে তাদের সাথে যৌন হয়রানির প্রশ্ন উঠেছে।

ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনের দুপুরের অধিবেশনে ‘নো নোবেল: মি টু ইন লিটারেচার’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জার্মান লেখক ওলগা গ্রাসনোয়া, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও অধ্যাপক ফিলিপ হেনশার, ব্রিটিশ লেখক রিচার্ড বিয়ার্ড, আমেরিকান লেখক রস পটার ও ভারতীয় লেখক, সম্পাদক ও সমাজকর্মী হিমাঞ্জলি শংকর। সঞ্চালক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় লেখক চন্দ্রবিভাস চৌধুরী।


চন্দ্রবিভাস চৌধুরী সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার স্থগিতের কারণ ও এর প্রভাব দিয়ে আলোচনা শুরু করেন। ফিলিপ হেনশার বলেন, ‘সুইডিশ একাডেমির এই পদক্ষেপ তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে সাহায্য করবে। নোবেল পুরস্কার ও তাদের কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে এই আন্দোলনের ফলাফলের ওপর। আগে অনেকেই কন্ঠস্বর না তুললেও এখন সবাই কন্ঠস্বর তুলছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে নোবেল পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাই।’
রস পর্টার বলেন, ‘যারা বই পড়ে, শিল্প ও সাহিত্যের চর্চা করে তাদের জন্য এই দূষিত পরিবেশ ক্ষতির দিকে নিয়ে যাবে। গত শতাব্দীতে প্রথম নারীবাদের আন্দোলন শুরু হয়। তারই ফলাফল এই মি টু আন্দোলন।’ হিমাঞ্জলি শংকর তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে যুক্ত করে বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে তেমন পরিবর্তন দেখিনি। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে এক ধরনের সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। শুধু নারীদের মধ্যে না, পুরুষদের মধ্যেও জনসচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’
আলোচক রিচার্ড বিয়ার্ড বলেন। ‘মি টু আন্দোলন সাহিত্যের ওপর যে প্রভাব তৈরি করেছে, তা শুধু সাহিত্যে কিংবা শিল্পকে ছাড়িয়ে ভেঙে দিয়েছে ক্ষমতার ভিত্তিকে।’ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফিলিপ হেশনার নারীদের আরও সাহসী ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন।
সঞ্চালক চন্দ্রবিভাস চৌধুরী বলেন, ‘যেসব লেখক এরকম ন্যাক্কারজনক কাজ করতে পারে তা লেখক হলেও শিল্পী হতে পারে না। কারণ একজন শিল্পী এ ধরনের কাজ করতে পারে না।’  
দর্শকের মধ্য থেকে একজন ব্রিটিশ নাগরিক তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন।
ব্যক্তি ও শিল্পকে আলাদা করা যায় তার কাজের ভিত্তিতে। যদি কোনও পুরুষ তার কাজের ক্ষেত্রে কোনও নারীকে হয়রানি করেন, তাহলে সেটা সাহিত্যের ক্ষেত্রে হোক কিংবা সাধারণ মানুষের জীবনেই হোক, সোচ্চার হওয়া জরুরি- এমন কথাই বলেন বক্তারা।