আমি ইউটিউবে বাংলাদেশের নাটক দেখি: শীর্ষেন্দু

ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে চমক ছিল দুই বাংলার অতি পরিচিত কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তার সঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। দর্শক সমাগমে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তন।

46047411_423076908226618_4570191673660801024_n(1)
অধীর আগ্রহে অপেক্ষামান ছিল কয়েক হাজার দর্শক। মিলনায়তনের আসন সীমিত থাকায় অনেকেই মেঝেতে বসেই উপভোগ করেছেন শীর্ষেন্দুর আলাপচারিতা। লেখকের বেশিরভাগ কথাতেই ছিল হাস্যরস, যা দর্শককে করেছে প্রাণবন্ত ও হাস্যজ্জ্বল। দর্শকদের ঘন ঘন করতালি প্রকাশ করছিল কতটা উপভোগ্য ছিল সেই সেশন। নিজের জীবনের বিভিন্ন লেখা নিয়ে আলাপচারিতা করেন প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক। এছাড়া অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। তার এই উত্তরের মধ্যেও ছিল রসিকতা এবং হাস্যরস।
প্রথম একজন দর্শক যিনি বিদেশে একটি মিশনে কাজ করেছেন, তিনি বলেন বিদেশে দেবদাসের নাম নিলে সবাই শাহরুখ খানকে চেনে। যখন তিনি একজনের কাছে জানতে চাইলেন দেবদাস কে লিখেছে? তারা কেউ উত্তর দিতে পারেনি। এখানে দেবদাসের কোনও সংকীর্ণতা কিংবা শরৎচন্দ্রের কোনও দায় আছে? বা আপনি সেখানে থাকলে কেমন লাগতো? জবাবে শীর্ষেন্দু বলেন, ‘লেখককে মনে রাখতে না পারলেও, লেখাটিকে মনে রেখেছে এটাও কম কথা নয়।’

45864731_697219653992684_5507295057373298688_n
আরেক দর্শক জিজ্ঞেস করলেন, শীর্ষেন্দুর লেখা ‘ঔষধ’ এবং শেক্সপিয়ারের ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ এই দুটি লেখার ব্যাপারে। এই নারীবাদী সমাজে ঔষধ লেখার পর প্রতিক্রিয়াটাই বা কেমন ছিল? জবাবে শীর্ষেন্দু বলেন, ‘এটা তো খুব নারীবিরোধী লেখা বলে তারা মনে করে! আমাকে প্রায় পেটানোর আয়োজন করেছিল। আমি ক্ষমা চেয়েছি, আসলে এই ওষুধটাকে সত্যিকারের ওষুধ বলবো না। আসলে আমি স্বামী স্ত্রীর মিলনটা দেখাতে চেয়েছিলাম। সেটা করতে গিয়ে আমাকে একটু বাঁকাপথ অবলম্বন করতে হয়েছিল। মেয়েরা আমাকে যথেষ্ট অপমান করেছে। আমার বিরুদ্ধে মিছিল করার কথা ছিল কিন্তু শেষ অবধি আর করেনি। আমাকে থ্রেট করেছে, আমি ঠিক হয়ে গেছি। এখন আর ওরকম কিছু লেখি না। আমি ভালো ছেলে হয়ে গেছি!’
আরেক দর্শকের প্রশ্ন আমরা বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের এত গুরুত্ব দিচ্ছি, কিন্তু সেখানে আমাদের লেখকদের কোনও গুরুত্ব নেই কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা একটা ফ্যাক্ট। কিন্তু মিলনের লেখা কিন্তু গুরুত্ব পায়। পাঠক যে লেখা পড়ছে না এমনটি নয়। অনেকেই বসে থাকে, লেখা চলে না। এই জিনিস কিন্তু আমরা সেখানেও দেখতে পাই। পাঠক কমছে, কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে, সব জায়গায় নয়। কাজেই এটা নিয়ে দুঃখ করার চেয়ে আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের সব লেখকই ধীরে ধীরে সম্মানিত হবে। ইউটিউবে সুন্দর সুন্দর বাংলাদেশি নাটক আছে। এখানকার টিভি চ্যানেল ওখানে দেখানো হয় না। পশ্চিমবঙ্গের ছেলেমেয়ে দেখতে পারে না। আমি কিন্তু ইউটিউবে বাংলাদেশের নাটক দেখি।
নাটকের গল্পগুলো খুব চমৎকার এবং মিষ্টি। আমার নিজেরও রোমান্টিক মিষ্টি গল্প পছন্দ। কাজেই এগুলো আস্তে আস্তে আদান প্রদানের মাধ্যমে হবে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। সাংস্কৃতিক জিনিস জোর করে চাপানো যায় না। ভালো কাজ করতে করতে সেই কাজ গৃহীত হবে। এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’