মিনিটে ৩০ সিডি নকল, হোতাসহ আটক ২৭




২২২২সিনেমা, নাটক, মিউজিকসহ অশ্লীল বিভিন্ন ভিডিও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে সেগুলোর নকল (পাইরেটেড কপি) রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতো মো. গিয়াস উদ্দিন (২৭)। পাইরেটেড সিডি রাইট করতে আধুনিক ছয়টি কপিরাইটার মেশিন স্থাপন করেছিল সে। এসব মেশিনের মাধ্যমে মিনিটে ৩০টি সিডি রাইট করা যেতো বলে জানিয়েছে র‌্যাব-৩।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যা ব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। আগেরদিন রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গিয়াস উদ্দিনসহ ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান জানান, গতকাল রবিবার দিনভর রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ পাইরেটেড সিডি, সিডি কপিরাইট মেশিন ও পাইরেসির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামসহ ২৭ জনকে আটক করে র‌্যাব-৩। সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে একটি ল্যাপটপ, ৩৫টি কম্পিউটার মনিটর, ৩৩টি সিপিইউ, দুটি ইউপিএস, ছয়টি সিডি কপিরাইট মেশিন, ১৯ হাজার ৭৬৪টি পাইরেটেড সিডিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র।
গিয়াস ছাড়া আটক হওয়া বাকিরা হলো মো. শাহিন (২৮), মো. রায়হান উদ্দিন (২৬), টিপন চন্দ্র হাওলাদার (২৬), তারেক হোসেন (২০), সম্রাট হোসেন (২১), মিজানুর রহমান (২২), সোহাগ হোসেন (৩০), নুর উদ্দিন (৪০), মো. রানা (২২), রাকির হোসেন (২৩), নাঈম উদ্দিন ভূঁইয়া (২৪), শেখ সালাহউদ্দিন (২৮), মো. জাফর (৩০), মামুন হোসেন (২২), আব্দুল আল মামুন (২৫), রোকন উদ্দিন (২৮), মো. অপু (২৬), মো. মনির (২০), মো. রায়হান (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (২১), আকবর হোসেন (২২), নাইমুল ইসলাম (১৯), পিন্টু মিয়া (২৪), মো. শাকিল (৩৩), সাইফুল ইসলাম (২৪) এবং আনোয়ার হোসেন (২৪)।
৩৩৩৩র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, ‘পাইরেসি ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে র‌্যাব-৩ এবং চলচ্চিত্র অশ্লীলতা ও পাইরেসি বিরোধী টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে ফকিরাপুল এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ পাইরেটেড সিডি ও সরঞ্জামসহ আসামি গিয়াস উদ্দিনকে আটক করা হয়৷ পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ২৬ জনকে আটক করা হয়।’
তাদের মধ্যে মতিঝিল এলাকা থেকে ১০ জন, বংশাল এলাকা থেকে তিনজন, কদমতলী এলাকা থেকে চারজন এবং শ্যামপুর থেকে নয়জনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আটক ২৬ জনই গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে পাইরেটেড সিডি সংগ্রহ করতো এবং এই কাজে তাকে সহায়তা করতো।’
এমরানুল হাসান বলেন, ‘এ ধরনের অসাধু ব্যক্তিদের কারণে বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অশ্লীলতা প্রচারের মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন যুবসমাজকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে অপসংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করছে। এতে ইন্ডাস্ট্রিও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
কেন পাইরেসি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাইরেসি ব্যবসা খুব সহজ একটি ব্যবসা। একটি সিনেমা, গান ইউটিউব বা ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে ডাউনলোড করে সেটি কপিরাইট করে থাকে তারা। এক্ষেত্রে তাদের একটি সিডির দাম সাত টাকা। পাইরেটেড এই সিডি এর থেকে বেশি দামে বাজারে ছাড়ে তারা। পাইরেসি বন্ধে নিয়মিত নজরদারি করা হচ্ছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, এ জন্য সামাজিক সচেতনতাও প্রয়োজন রয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘আমার নির্মিত ২৩টি চলচ্চিত্রের কোনটিই পাইরেসির হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এই পাইরেসি রোধ করতে র্যা ব সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই পাইরেসির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলে আমাদের এই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি অনেক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে।’