কিছু র‌্যাব সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীকে দায়ী করা যায় না: হাইকোর্ট

সুপ্রিম কোর্ট
কিছু উচ্ছৃঙ্খল র‌্যাব সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে না বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন,  কিছু র‌্যাব সদস্যের কারণে সামগ্রিকভাবে পুরো বাহিনীকে দায়ী করা যায় না। সোমবার (১৯ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় হাইকোর্ট থেকে প্রকাশিত রায়ে ওই মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায় ঘোষণাকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষর শেষে ১ হাজার ৫৬৪ পৃষ্ঠার রায়টি প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ডিতরা যে ধরনের অপরাধ করেছেন, তারপরও যদি তাদের উপযুক্ত সাজা না দেওয়া হয়, তাহলে বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থাহীনতা তৈরি হবে। জনগণের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাবের প্রতি মানুষের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। রায়ে আরও বলা হয়, নূর হোসেনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের বিরোধের জেরেই সাত খুনের ঘটনা ঘটে। এই খুনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তৎকালীন র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন, এমএম রানা ও কাউন্সিলর নূর হোসেন জড়িত থাকার অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে। এছাড়া অন্য আসামিরাও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

আদালতের মতে, মানবতাবিরোধী ও মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কঠিন বার্তা দেওয়া প্রয়োজন। যেন ভবিষ্যতে কেউ এই ধরনের অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত না হন। কেউ যেন নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে না করেন। এজন্য অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ। ওই রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক মোস্তফা জামান ইসলাম নিজস্ব অভিমত দিয়েছেন।

এরআগে, ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ মামলার ২৬ আসামিকেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এর মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থেকে প্রেষণে র‌্যাব-১১-তে কর্মরত ছিলেন। মামলার পর তাদের নিজ নিজ বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।  এরপর, গত বছরের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট সাত খুন মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে অন্যতম আসামি লে. কর্নেল (বরখাস্ত) তারেক সাঈদ, কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয় ১১ জনকে।  

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। তারপর তাদের হত্যা করে লাশগুলো গুম করা হয়। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের ছয়জনের এবং পরদিন আরেকজনের লাশ পাওয়া যায়। পরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেন নিহতের স্বজনরা।