দেশের ৬৬ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর ওপর সহিংসতা বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়দেশের ৬৬ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এবং জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম (জেএনএনপিএফ) ও একশনএইড বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি দুটির যৌথ গবেষণা কর্ম ‘বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার উপর দৃষ্টিপাতঃ প্রবণতা এবং সমাধান”-এ এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এবং সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ আয়োজিত সহিংসতা ও প্রতিরোধ বিষয়ক সেমিনারে গবেষণার এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে গবেষক আহমেদ ইব্রাহিম বলেন, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার বেইসলাইন জরিপ ২০১৫-এর তথ্য এবং দেশের ২০ জেলায় সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার সবচেয়ে ব্যাপক রূপ হচ্ছে পারিবারিক সহিংসতা। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার মামলার প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে ২ জন অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন।

এ ছাড়া নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে চারটি মামলাই আদালতে উত্থাপিত হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়, তারপর শুরু হয় বিচারিক প্রক্রিয়া। সহিংসতায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৩.১ শতাংশ নিজেদের পক্ষে বিচার পায়। বাকি ৯৬.৯ শতাংশ ভুক্তভোগীর অভিযোগ আদালতে শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়। অপরদিকে, আদালত মামলা খারিজ করে দেওয়ার বা অপরাধীকে খালাশ দেওয়ার সম্ভাবনা ৩২ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে নারীরা এখনও নিজ ঘরে নির্যাতন, অত্যাচার ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু গণমাধ্যমে সেগুলো আসে না, এসব ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন হয় না। শুধুমাত্র ১০.৭ শতাংশ মামলা থাকে পারিবারিক বিরোধ সংক্রান্ত, কিন্তু গণমাধ্যমে প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৭৫ শতাংশ প্রতিবেদনই ধর্ষণ বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ সম্পর্কিত। ফলে ‘নারীরা ঘরেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ’- এমন ধারণাকেই প্রচার করা হয়। নিজ সঙ্গী দ্বারা সহিংসতার শিকার হওয়ার হার উচ্চ হওয়া স্বত্ত্বেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারী (৭২.৭ শতাংশ) তাদের অভিজ্ঞতার কথা কাউকে বলেন না। মাত্র ২.১ শতাংশ নারী স্থানীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন এবং মাত্র ১.১ শতাংশ নারী পুলিশের কাছে সাহায্য চায়।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ, একশনএইড বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিভাগের ব্যবস্থাপক এ এম নাসির উদ্দিন, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফৌজিয়া খন্দকার ইভা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন এবং কালারস এফএম’র প্রধান (অপারেশন) তাসনুভা আহমেদ।