সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পোস্টার লাগায় না কেউ

ডিএনসিসি এলাকায় পোস্টার লাগানোর নির্ধারিত স্থান

পোস্টার লাগানোর জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিভিন্ন এলাকায় ২০টি নির্ধারিত জায়গা রয়েছে। তবে সেসব জায়গায় কেউ পোস্টার লাগায় না। এসব দেখার দায়িত্বে থাকা ডিএনসিসি’র কর্মকর্তারা জানান, আনিসুল হক মারা যাবার পর এসব আর দেখভাল করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে বর্তমানে ডিএনসিসি’র কোনও কার্যক্রমও নেই।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আসাদগেটে ফুটপাতের ওপরে ডিএনসিসি’র পরিচ্ছন্নকর্মীদের জিনিসপত্র রাখার একটি কক্ষের দেয়ালে স্টিলের কাঠামো (স্ট্যান্ড) দিয়ে পোস্টার লাগানোর জন্য জায়গা করা হয়েছে। কাঠামোটির ওপরে পোস্টার লাগানোর জন্য ডিএনসিসি আহ্বান করেছে, পাশাপাশি যত্রতত্র পোস্টার লাগানোর শাস্তি সম্পর্কেও অবহতি করা হয়েছে। তবে সেখানে পোস্টার না লাগিয়ে আশেপাশে যদ্রতত্র পোস্টার লাগানো হয়েছে।

ডিএনসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমোডর আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যতগুলো ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার মধ্যে এটি একটি। এবছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা (ডিএনসিসি) শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)-এর ১৯টি জায়গায় ২০টি স্টিলের কাঠামো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ যত্রতত্র পোস্টার লাগিয়ে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট না করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নাগরিকদের এবিষয়ে সচেতন করা যায়নি।

তিনি জানান, বিনামূল্যে এসব জায়গায় পোস্টার লাগানোর সুযোগ রয়েছে। যেকোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এখানে বিনামূল্যে পোস্টার লাগাতে পারবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসাদগেট ছাড়াও মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সেন্টার, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে টিঅ্যান্ডটি মাঠের পাশে, ফার্মগেট, মিরপুর টোলারবাগ আবাসিক এলাকা, মিরপুর-১ রাইনখোলা মোড়, মিরপুর-২ নম্বরে পিডব্লিউডি স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে, প্রগতি সরণির কোকাকোলা মোড় ও নিকেতন এলাকায় ডিএনসিসি’র পোস্টার লাগানোর স্ট্যান্ডগুলো খালি পড়ে আছে।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনও দেয়ালে বা স্থানে পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ। আইনভঙ্গ করে কেউ যত্রতত্র দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগালে এর সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে অন্যূন ১০ হাজার টাকা এবং অনুর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হবে, অনাদায়ে অনধিক ৩০ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা যাবে এবং ওই সুবিধাভোগীকে তার নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেয়াল লিখন, পোস্টার মুছে ফেলার বা অপসারণের জন্য আদেশ প্রদান করতে পারবে আদালত।

এই আইনের ভিত্তিতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারকে জরিমানা করেছিল ডিএনসিসি। কয়েকটির লাইসেন্সও বাতিল করেছিল। তবে মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর এই কার্যক্রম আর অগ্রসর হয়নি। মহানগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে আনিসুল হক যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটি আর এগোয়নি। এখন আইন ভঙ্গ করে পোস্টার লাগানোর উৎসব চলছে।
এ বিষয়ে কমোডর আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউন বলেন, ‘আমরা অতীতে এনিয়ে কাজ করেছি। তবে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়েছিল,কিন্তু নাগরিকদের নিজেদের সিটি নিজেদেরই পরিষ্কার রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নগরবাসীকে আহ্বান জানাবো নির্ধারিত স্থানে পোস্টার লাগানোর।’

আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযানে যেতে যে সংখ্যক জনবল, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন আমরা তা পাচ্ছি না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি।’