মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘সরকার নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করেছে। সেটি ১ ডিসেম্বর থেকে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও মালিক পক্ষ শ্রমিকদের সেই অনুযায়ী বেতন-ভাতা দিচ্ছেন না। এদিকে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই বাড়িওয়ালা পাঁচশ টাকা করে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। আমাদের বেতন না বাড়লে এই টাকা আমরা কই থেকে দেবো? ’
সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে শুধু তিনি-ই নন রবিবার ও সোমবার রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা আজমপুর ও বিমানবন্দরে মহাসড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর সকালে দক্ষিণখানের চালাবন এলাকার শান্তা গার্মেন্টস লি. ও চৈতি লি. এর শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধের উদ্দেশ্যে বের হলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এসময় বেশ কয়েকজন শ্রমিক ও পুলিশের ৭ জন সদস্য আহত হন। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আব্দুল্লাহপুর-হাউজ বিল্ডিং থেকে বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত পুরো উত্তরা এলাকায় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা।।
শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী ৫১ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি শুধু ৭ম গ্রেডের ক্ষেত্রেই দিচ্ছে মালিকরা। সবাইকে দেওয়া হচ্ছে না। শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে মালিকপক্ষ মূল্যায়ন করছে না। সকাল ৮ থেকে রাত পর্যন্ত টানা কাজ করতে হয়। একটু টয়লেটে গেলেই অকথ্য ভাষায় শ্রমিকদের গালাগালি করে মালিক পক্ষ। অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা, ন্যায্য বেতন-ভাতার দাবি করলে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে মারধর করা হয়।
এদিকে শ্রমিকদের এই অবরোধের কারণে রাজধানীর জুড়েই মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। যানবাহন চলাচল না করায় অনেকেই ব্যাগ ও বোঝা কাঁধে নিয়ে হেঁটে হেঁটে চলাচল করেছে। শ্রমিকরা গণপরিবহন চলাচল করতে দেয়নি। এতে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরের যাত্রীরাও পড়েছেন ভোগান্তিতে।
অবরোধ চলাকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল শ্রমিকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘সরকারি মজুরি কাঠামো অনুযায়ী আপনারা (শ্রমিকরা) যাতে বেতন-ভাতা পান, সেটি আমরাও চাই। এজন্য সড়ক অবরোধ করে হাজার-হাজার মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলার কোনও মানে হয় না। মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করুন। যদি কোনও জ্বালাও পোড়াও অথবা ভাঙচুর করেন, তবে আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকবো না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরের সামনের সড়কে দুরপাল্লার এনা পরিবহনের একটি বাস ভাঙচুরের পর তাতে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন গার্মেন্টের মালিকরা শ্রমিকদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু, তাতেও শ্রমিকরা সড়কের অবরোধ তুলে নেননি। পরে পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে বিমানবন্দর মোড় থেকে আজমপুর পর্যন্ত মার্চ (পায়ে হেটে) করে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। দুপুর আড়াইটার দিকে উত্তরা এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা দাবি করেন, তারা বাসে অগ্নিসংযোগ করেননি। শান্তিপূর্ণভাবে বিমানবন্দর চত্বরে কর্মসূচি পালন করেছেন। অন্য কেউ শ্রমিকদের এই আন্দোলনকে নষ্ট করতে ওই বাসটিতে আগুন দিয়েছে।
শ্রমিক রুবেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ন্যায্য বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করছি। কোনও ভাঙচুর বা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে আসিনি। কে বা কারা ওই বাসে আগুন দিয়েছে সেটি আমরা জানি না।’
উলেবাসে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল সাংবাদিকদের জানান, ‘ঘটনার তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে, বাসটিতে কারা আগুন দিয়েছে। যারাই অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
উল্লেখ্য, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে এর আগে রবিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, উত্তরার জসীমউদ্দীন ও বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা। পরে পুলিশের সহায়তায় মালিকপক্ষের আশ্বাসের পর দুপুর দেড়টার দিকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা।