রাজধানীর ডেমরা থানার কোনাপাড়ার সামিউল আহসান সড়কের শেষ মাথার আবুল হোসেনের সাত তলা বাড়ির নিচ তলার একটি কক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। যে বাড়িটি থেকে শিশুদুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাড়ি থেকে তাদের বাসা ৫০ ও ৮০ গজ দূরে। পুলিশের ধারণা, শিশু দুটিকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে শিশু দুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। শোকে বিহ্বল শিশুর বাবা-মা ও স্বজনরা।
বিলাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ মাসেই কোনাপাড়া আইডিয়াল স্কুলে নার্সারিতে ভর্তি করিয়েছি দোলাকে। স্কুলের নতুন ড্রেস পরে আজ সকালেই প্রথম স্কুলে যায়। পাশের বাসার নুসরাত আর দোলা সারাদিন একসঙ্গে থাকে। সেজন্য তাদের একই ক্লাসে, একই স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। সোমবার সকালে স্কুলে গিয়ে তারা বই নিয়ে আসে। বই পেয়ে তারা খুব খুশি হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘তারা স্কুল থেকে ১০টার দিকে আসে। বাসায় কিছুক্ষণ পড়ার পর দোলা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তার সঙ্গে পাশের বাসার নুসরাতও বের হয়। তারা বাসার পাশেই খেলছিল। দুপুরে আমার মা (দোলার নানু) তাকে গোসল করানোর জন্য ডাক দেয়, আসি বলে আর আসেনি। এরপর আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। মাইকিং করি কিন্তু কোথাও তাদের পাওয়া যাচ্ছিল না।’
সন্ধ্যায় মোস্তফার কক্ষ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। আজ (৮ জানুয়ারি) ছিল দোলার জন্মদিন। এই কথা মনে করে দোলার চাচা জাকির হোসেন ও মামা বিলাল হোসেনকে বিলাপ করতে দেখা গেছে।
দোলাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী দশমিনা থানার আলীপুরা এলাকায়।
দোলাদের বাসার বিপরীতে একটি টিনশেডের ছোট কক্ষে বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিল নুসরাত । তার বাবার নাম পলাশি মিয়া। মা ফাহিমা বেগম। ঝালকাঠি জেলায় তাদের বাড়ি। সাড়ে চার বছর বয়সী নুসরাত বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
নুসরাত জাহান ফারিয়ার মামা মহিউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্কুল থেকে আসার পর খেলতে বের হয় নুসরাত, এরপর আর বাসায় আসেনি। আমরা বুঝতেছি না কীভাবে ওই বাসায় গেল, কে নিয়ে গেল?’
তার মামা নুসরাতের নতুন বইগুলো হাতে নিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘মাত্র একদিন স্কুলে গেল, বই নিয়ে আসলো এরপর পৃথিবী ছেড়েই চলে গেল।’
যে বাড়িটিতে দুই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে সেখান থেকে মঙ্গলবার দুপুরে ডেমরা থানা পুলিশকে আলামত সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
বাড়িওয়ালা আবুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার এলাকায় এক ব্যক্তি গ্রিলের দোকানে কাজ করেন। আমার নিচতলার এই কক্ষটি যখন খালি হয়, তখন ওই ব্যক্তি তার বোন আঁখি ও বোনের স্বামী মোস্তফাকে ভাড়া দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আঁখি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। আর বোনের স্বামী রাজমিস্ত্রি। গরীব মানুষ ভেবে তাদের কাছে ২৫শ’ টাকায় কক্ষটি ভাড়া দেই। চার মাস ধরে তারা এখানে ভাড়া আছেন। আমি কখনও খারাপ কিছু দেখিনি।’
এই দুই শিশু হত্যা ঘটনায় দোলার বাবা ফরিদুল ইসলাম বাদি হয়ে ডেমরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় রাজমিস্ত্রি মোস্তফা ও আজিজুল নামে আরেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
ডেমরা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. ইফতেখায়রুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে। আমরা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। আশাকরি দ্রুত দুই শিশুর হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারবো।’