স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণসামগ্রী দিয়ে রাস্তা দখল না করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে সহকারী সচিব তৌহিদুল আলম ও তার চাচাতো ভাই মুকুল আহমেদকে বহুবার অনুরোধ করলেও তারা কথা রাখেননি। তৌহিদুল আলম উল্টো এলাকাবাসীর ওপর প্রভাব খাটান। তার ক্ষমতা দেখিয়ে মুকুল আহমেদ ও তার বোন পেয়ারা বেগম এলাকাবাসীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী রেখে বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে পুলিশকে অভিযোগ করলেও কাজে আসেনি। ফলে সড়কটিতে দুর্ভোগ লেগেই আছে। তবে খবর পেয়ে সিটি করপোরেশন তাদেরকে রবিবার (২০ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক হাবিব গত শুক্রবার বাড়ি দুটির মালিকদের মালামাল সরিয়ে নেওয়া জন্য একদিনের সময় বেঁধে দেন। সরিয়ে না নিলে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। একই অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার বিকাল ৫টায় কলাবাগান থানার এসআই বিলাল ও আরিফের নেতৃত্বে পুলিশের দুটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক থেকে নির্মাণসামগ্রী অপসারণ করার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু এ সময় বাড়ির মালিক মুকুলের বোন পেয়ারা বেগম পুলিশের কথায় কর্ণপাত করেননি। তিনি উল্টো পুলিশকে সড়কে মালামাল রেখে ভবন নির্মাণের ‘যৌক্তিকতা’ তুলে ধরেন। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় তর্ক-বিতর্ক করতে থাকেন।
ঘটনার একপর্যায়ে পুলিশের একজন সদস্য ফোন এসেছে বলে উপপরিদর্শক (এসআই) বিলালের হাতে একটি মোবাইল ফোন ধরিয়ে দেন। এসআই বিলাল অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে জানা গেলো ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি সেই বাড়ি মালিক সহকারী সচিব তৌহিদুল আলম। এ সময় পাশে থাকা বাড়ি মালিকের লোকজন ও স্থানীয় বেশ কয়েকজন অধিবাসী বলতে থাকেন, ‘সচিব সাহেব’ ফোন করেছেন, এখন পুলিশ চলে যাবে।’
দীর্ঘ কথোপকথনের একপর্যায়ে এসআই বিলাল বলেন, ‘স্যার আমরা যতক্ষণ এখানে আছি অন্তত ততক্ষণ শ্রমিকদেরকে রাস্তা থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কাজ করতে বলেন। অন্তত মানুষ দেখুক। আমরা এসে কিছু করেছি।’
তখন পুলিশের সদস্যরা দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান নিলেও লোক দেখানোর জন্য সামান্য ইটপাথর সরিয়ে নেওয়ার পর তারা চলে যায়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআই বিলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সেখানে জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে বেশ কিছু কাজ করেছি। অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে।’
কিন্তু তাকে কে এবং কেন ফোন করেছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিলাল বলেন, ‘তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছেন। তিনি সিনিয়র সহকারী সচিব পরিচয় দিলেন। তাকে আমরা বললাম, স্যার আপনার বাড়িটাও উঠবে, রাস্তায় লোকজনও চলবে। আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে। কেউ যাতে চলার পথে বিরক্ত না হয়। আমাদের কাছে একাধিকবার টেলিফোন এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে অনেক ভারি কথা বলেছি। তিনি আমার কথাগুলো গ্রহণ করেছেন। তখন তিনি বলেছেন, “ঠিক আছে আমি এগুলো করবো।” কিন্তু আমি থাকতে থাকতে লোকগুলো কিছুটা কাজ করেছে। চলে আসার পর আবার আগের মতো হয়ে গেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা শাফায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তো জানি বাড়ির মালিক আলম সাহেব সচিব। এজন্য আমরা আর কোনও কথা বলি না। এই রাস্তায় যে দুর্ভোগ তাতে আমরা খুবই অতিষ্ঠ।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার এসআই আরিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গিয়েছি। কথা বলেছি। তারা তো স্থানীয়। তারা বলেছেন, যতটুকু সম্ভব মানুষকে ডিস্টার্ব না করে কাজ করবেন। আমরা মালামাল সরিয়ে দিয়েছি।’
কিন্তু মালামাল তো আগের মতই রয়ে গেছে– এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু পরে আবার কী করেছে জানি না। আমরা রাতের বেলায় আমাদের যে টিমগুলো যায় তাদের বলবো।’
তৌহিদুল আলমের ‘দাপটে’ আত্মীয়-স্বজনরাও হয়ে উঠছেন বেসামাল। তারা কোনও আইনকেই তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী সচিব এফএম তৌহিদুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি তো সেখানে গিয়েছি। রাস্তায় আমার কোনও নির্মাণসামগ্রী নেই। স্থানীয় একটা ফল বিক্রেতার বালু দিয়ে রাস্তা ভরাট করে ফেলেছে। আমার বিরুদ্ধে যদি কেউ অভিযোগ করে তবে আমি সেই লোকটির নাম জানতে চাই। এখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার মতো কোনও লোক নেই। কারণ জীবনে কারও কোনও ক্ষতি করিনি। আমি সামাজিক মানুষ।’
পুলিশ রাস্তা দখলমুক্ত করতে গেলে তার নাম ভাঙিয়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করা হয়েছে। সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না-না, ছিহ! আপনি এ কথা বলতে পারেন?’
কিন্তু রাস্তায় তখনও নির্মাণসামগ্রী রয়েছে। পুলিশ গিয়ে সেগুলো অপসারণ করতে গেলে তিনি ফোন করে নিষেধ করেন। সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো কাউকে ফোন করিনি। হ্যাঁ অবশ্যই এটা রাস্তার বিষয়। জনগণের সম্পদ। আমি বুঝতে পারছি না। আপনি প্রেস ক্লাবের সদস্য কিনা? আপনি কত নম্বর সদস্য? ঘটনা হচ্ছে, মুকুলদের সঙ্গে ওদের (স্থানীয়দের) বিরোধ আছে, সেটা আমাদের সঙ্গে মিট করতেছে। এটা ঠিক না তো। আমি এমন একটা অবস্থা জীবনেও দেখিনি। ’
এটা তো রাস্তার কাজ? এজন্য আপনাকে ব্যবহার করতে হবে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি আমাকে একটা ভালো তথ্য দিলেন। এজন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি বিষয়টা বুঝতে পারতেছি এখন। আমার কোনও মালামাল রাস্তায় থাকলে সরিয়ে নেবো।’
ডিএসসিসির স্থানীয় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর সেখানে আমাদের লোক গেছে। আমরা সময় দিয়েছি। এর মধ্যে মালামাল না সরিয়ে নিলে সব নিয়ে যাবো।’