সরকারি হাসপাতালের ছোট্ট প্রেসক্রিপশনে ধরে না সব তথ্য

বহির্বিভাগে রোগীর টিকিট (প্রেসক্রিপশন)দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন রোগীরা। এই ১০ টাকার টিকিটটিই পরামর্শপত্র (প্রেসক্রিপশন) হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এটি আকারে এত ছোট যে, এতে সব তথ্য লিখতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এ অবস্থায় টিকিটটি বড় করে এ ফোর সাইজ করার ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

রাজধানীর শ্যামলীর বাসিন্দা আজমিরী বেগম (৪২) একটি সরকারি হাসপাতালে গেছেন চিকিৎসা নিতে। তার ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ থাকায় চিকিৎসকেরা পরামর্শপত্রে অনেক ওষুধ লিখে দিয়েছেন। কিন্তু অনেক ওষুধের নামই পড়তে পারছেন না তিনি। একই অবস্থা সুরাইয়া বেগমেরও (৩৫)। তারও প্রেসক্রিপশনের লেখাগুলো অনেক ছোট ছোট করে লেখা, সেগুলো পড়তে কষ্ট হয়।

এই অবস্থার জন্য সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিটের সাইজই প্রধান কারণ বলছেন চিকিৎসকেরা। তাদের মতে, এই টিকিট ১৯৭২ সালে চালু হয়। তখন মানুষের রোগ কম হতো। কিন্তু এখন সময় বদলেছে কিন্তু টিকিটের সাইজ একই আছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে এই টিকিটের আকার বড় করা জরুরি। 

বহির্বিভাগে রোগীর টিকিট (প্রেসক্রিপশন)বিষয়টি সম্পর্কে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. রাজীব দে সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালের আউটডোরের টিকেটে কোনও কাজই করা যায় না। একটি আদর্শ পরামর্শপত্র লেখার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। রোগীর যেমন সব তথ্য থাকতে হবে তেমনি চিকিৎসকেরও সব তথ্য থাকতে হবে। কিন্তু রোগীর সব তথ্য লেখা হলে চিকিৎসকের তথ্য লেখার জায়গা থাকে না। আবার চিকিৎসকের সব তথ্য লেখা হলে রোগীর তথ্য লেখার জায়গা থাকে না। রোগীর সমস্যা লেখা হলে চিকিৎসা লেখার জায়গা থাকে না। এ পরামর্শপত্র অন্য কোনও চিকিৎসক দেখলে কিছুই বুঝতে পারবেন না। বিষয়টি নিয়ে বারবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কাজ হয়নি।

সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতালের টিকিটের জন্য ১০ টাকা নেওয়া হয়, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ৫ টাকা, ইউনিয়ন পরিষদে নেওয়া হয় ২ টাকা এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি প্রেসক্রিপশনে রোগীর নাম, বয়স, তারিখ এবং ক্ষেত্র বিশেষে শিশুদের ওজনও লিখতে হয়। বাম দিকে রোগের বিবরণ লিখতে হয়। এরপর চিকিৎসককে রোগীর লক্ষণগুলো লিখতে হয়। তারপর ডান দিকে আরএক্স চিহ্ন দিয়ে ওষুধের নাম লিখতে হয় এবং নিচে চিকিৎসকের স্বাক্ষর দিতে হয়। আর ওষুধ লেখার সময় ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা ইনজেকশন এটা লিখতে হয়। এটা কত মিলি, ডোজ কতটুকু, খাওয়ার আগে না পরে তা লিখতে হয়। সেই সঙ্গে ওষুধের নামটা অবশ্যই ইংরেজিতে লিখতে হয়।’

বহির্বিভাগে রোগীর টিকিট (প্রেসক্রিপশন)বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টস- এর প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘চিকিৎসার ডকুমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরামর্শপত্রে রোগীর ডকুমেন্টে সব সমস্যা থাকতে হবে। কী কী টেস্ট হয়েছে এবং কী ওষুধ রোগী খাচ্ছেন সেগুলো থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালগুলোতেও এখন প্রেসক্রিপশন প্যাড ব্যবহার করা উচিত। প্যাডে সবকিছু লেখা যায়। এখনকার ছোট্ট এই টিকেটে কী লিখবেন?’ 

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) মোহাম্মদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন রোগ ও ওষুধের পরিমাণ বেড়েছে। আবার প্রেসক্রিপশনের মধ্যেই টেস্টের বিষয় লিখে দিই। আমরা বলি এই টেস্টগুলো করে নিয়ে আসেন। এই প্রেসক্রিপশন কীভাবে বড় করা যায় এটা নিয়ে আমাদেরও পরিকল্পনা আছে।’