তিনি জানান, শুধু দুদক এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। পুলিশ জাহালমকে গ্রেফতার করেছে। সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করা হবে। জাহালমের ঘটনায় যদি কারও গাফেলতি থাকে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশে সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় দায়ের হওয়া ২৬টি মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১টায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্তি পান জাহালম। ‘বিনা অপরাধে ৩ বছর ধরে কারাভোগ করছে জাহালম’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ হবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। অপরাধ না করে জাহালমের গ্রেফতার হওয়া এবং কারাভোগের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের বক্তব্য শোনার পর আদালত বলেন, ‘আপনারা অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নিলে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন হবে না। সেটি না হলে আদালত ব্যবস্থা নেবে।’ এ সময় জাহালমকে দুদক বা ব্যাংকের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা দায়ের করে দুদক। এই অভিযোগে দুদক কার্যালয়ে হাজির হওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি যায় জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়। চিঠি পেয়ে প্রায় ৫ বছর আগে দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে জাহালম বলেছিলেন, তিনি মামলার আসামি সালেক নন, তার নাম জাহালম। এ সময় জাহালম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। কিন্তু সেদিন নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কথা দুদকের কেউ বিশ্বাস করেননি। দুদকের ভুলের কারণে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আসামি সালেকের বদলে গ্রেফতার হন জাহালম। এরপর দুদকের ওইসব মামলায় সালেকের বদলে তিন বছর কারাগারে বন্দিজীবন কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের নির্দোষ জাহালমকে। কারাবন্দি জাহালম বহুবার আদালতে হাজিরা দিলেও তার জামিন মেলেনি। ইতোমধ্যে দুদকের ৩৩টি মামলার মধ্যে ২৬টি মামলায় জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এসব মামলায় বিচারিক আদালতে বিচার শুরু হয়।
দুদকের মামলায় প্রকৃত আসামি আবু সালেকের স্থলে নির্দোষ শ্রমিক জাহালম কারাগারে বন্দি থাকার বিষয়টি গত ৩০ জানুয়ারি বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। এরপর আদালত রবিবার জাহালমকে দুদকের ২৬ মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দিয়ে বলেন, কোনও নির্দোষ ব্যক্তিকে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা নই। জাহালমের কারাগারের মেয়াদ একদিন বাড়বে তো আপনার (দুদক) ওপর কমপেনসেশন (ক্ষতিপূরণ) বাড়বে। কমপেনসেশন করতে হবে। দুদক করেন বা ব্যাংক করেন। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার রাতে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন জাহালম ওরফে জানে আলম।