তিন তরুণকে অপহরণের মামলায় দুই পুলিশ সদস্য গ্রেফতার

গ্রেফতারের প্রতীকী ছবি

তিন তরুণকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ। একইসঙ্গে এই ঘটনায় কারও কাছে কোনও তথ্য থাকলে তা জানানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্য হলেন কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমান। 

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, ‘শনিবার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তাদের ইউনিফর্মও খুলে নেওয়া হয়েছে।’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তিন তরুণকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর নিজ নিজ পুলিশ লাইন্সে যুক্ত করা হয়েছিল তাদের। তবে শুক্রবার দুই পুলিশ সদস্য একে অপরকে দায়ী করে দোষ স্বীকার করায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

অপহৃতরা হলেন- গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ি এলাকার হান্নান সরকারের ছেলে রায়হান সরকার, একই এলাকার লতিফ সরকারের ছেলে লাবিব হোসেন ও একই জেলার শ্রীপুর উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে নওসাদ ইসলাম মাহফিন। এদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।

অপহৃত নওসাদ ইসলামের বাবা মজিবর রহমান জানান, বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে রাজধানীর বাণিজ্য মেলার উদ্দেশে রওনা হন পাঁচ বন্ধু। বিকাল পাঁচটার দিকে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় শিলা-বৃষ্টি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে যান। এসময় তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান নামে দুই বন্ধু গাড়ি থেকে নেমে পাশের দোকানে চা খেতে যান। বাকিরা গাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। এসময় দুটি গাড়ি নিয়ে সাদা পোশাকে সেখানে হাজির হন এএসআই মামুন ও মুসরাফিকুর। মুসরাফিকুরের মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকের আরও কয়েকজন লোক ছিলেন। তারা রায়হানসহ তিন বন্ধুকে টেনে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তোলেন। পরে তাদের টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দেওড়া এলাকায় নির্মাণাধীন উড়াল সড়কের নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিন বন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা। দাবি করা টাকা না দিলে ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান দুই এএসআই।

তবে গাড়ির বাইরে থাকা অন্য দুই বন্ধু তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান এরই মধ্যে মুঠোফোনে তাদের পরিবার ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশকে ‘তিন বন্ধুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে’ অবহিত করেন। এরপর কালিয়াকৈর থানার ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার বিষয়টি মির্জাপুর থানায় জানান। পরে দুই থানার সহযোগিতায় অপহৃত তিন বন্ধুকে উদ্ধার করে বুধবার রাত ৮টার দিকে মির্জাপুর থানায় এবং পরে রাত ১২টার দিকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গাজীপুর পুলিশ লাইন্সে ও মির্জাপুর থানার মুসরাফিকুর রহমানকে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়।