আব্দুল্লাহিল কাফি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নিহত অধ্যক্ষ এলিফ্যান্ট রোডের সুকন্যা টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। পুলিশ ধারণা করছে, তার বাসার দুই গৃহকর্মী এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ঘটনার পর থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আব্দুল্লাহিল কাফি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে দুজন গৃহকর্মী ওই বাসায় কাজ করতো, তাদের নাম-ঠিকানা পেয়েছি। আমরা ধারণা করছি, তারাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আমরা সন্দেহভাজন খুনিদের আটকে অভিযান শুরু করেছি।’
পুলিশের অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, ওই বাসায় পারভীন নামে আরেক গৃহকর্মী ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সুকন্যা টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে স্বামী ইসমাত কাদির গামার সঙ্গে থাকতেন মাহফুজা চৌধুরী পারভীন। ইসমাত কাদির গামা জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখেন, পুরো বাসা লণ্ডভণ্ড। তার স্ত্রী মেঝেতে পড়ে আছেন। পরে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশের ধারণা, মাহফুজা চৌধুরীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ওই বাসায় যে দুজন গৃহকর্মী ছিল তারা মাহমুদা চৌধুরীকে হত্যার পর মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়েছে।
মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের স্বামী ইসমাত কাদির গামা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ডাকসুর সাবেক জিএস ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি ছিলেন।
ইসমত কাদির গামা জানান, তিনি দুপুরে ব্যবসার কাজে সিভিল এভিয়েশনে যান। সন্ধ্যায় বাসায় এসে দরজা বন্ধ পান। পরে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে স্ত্রীকে শয়নকক্ষে চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। তার গলার কাছে হলুদ একটা কাপড় পেঁচানো ছিল। পাশে একটা বালিশ ছিল। পরে তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান।
স্বজনেরা জানান, গত মাসেই স্বপ্না ও রেশমা নামে দুইজন গৃহকর্মী এই বাসায় কাজে যোগ দেয়। স্বপ্নার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনায় আর রেশমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারি। ঘটনার পর থেকে তারা দুইজন পলাতক রয়েছে।
স্বজনেরা আরও জানান, নিহত মাহফুজা চৌধুরীর দুই সন্তানের একজন অভিক, যিনি সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোরে মেজর হিসেবে যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত আর অন্য ছেলে অমিত ইউসিবিএল ব্যাংকে চাকরি করেন। তিনি ইন্দিরা রোডে থাকেন।
স্বজনেরা জানান, মাহফুজা চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে তিনি অবসর নেওয়ার কথা থাকলেও আরও তিন বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে তিনি অবসর নেন।
৩৫ মিরপুর রোডে অবস্থিত সুকন্যা টাওয়ারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৬ তলার ডুপ্লেক্স ওই ফ্ল্যাটে অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের স্বজনদের ভিড়। পুলিশ, ডিবি ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসেছেন। খবর পেয়ে সিআইডির ফরেনসিক টিমের সদস্যরা এসে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন।