সাবেক অধ্যক্ষ খুন: ২৪ ঘণ্টায়ও ধরা পড়েনি দুই গৃহকর্মী

ইডেনের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন

ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন দুই গৃহকর্মীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার পর থেকে দুই গৃহকর্মী রেশমা ও স্বপ্না পলাতক রয়েছে। এছাড়া দুই গৃহকর্মীকে সরবরাহকারী রুনু ওরফে রাকিবের মাও পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তারা পরিকল্পিতভাবে মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যার পর স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ইসমত কাদির গামা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। আমরা সন্দেহভাজন হিসেবে দুই গৃহকর্মীকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’

মামলার এজাহারে ইসমত কাদির গামা বলেছেন, রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ব্যবসায়িক কাজে তিনি বাসা থেকে বের হন। এসময় বাসায় তার স্ত্রীর সঙ্গে তিনজন গৃহকর্মী ছিল। এরা হলো রাশিদা (৫৫), রুমা ওরফে রেশমা (৩০) ও স্বপ্না (৩৫)। সন্ধ্যায় তিনি বাসায় ফেরার সময় স্ত্রীকে ফোন করতে গিয়ে তার মোবাইল বন্ধ পান। পরে বাসায় গিয়ে দরজা ধাক্কাধাক্কি করার পর ভেতর থেকে বৃদ্ধা গৃহকর্মী রাশিদা দরজা খুলে দেন। এসময় তিনি তার ডুপ্লেক্স বাসার নিচতলার দরজা খোলা ও ওপরতলার বেডরুমে স্ত্রী মাহফুজা চৌধুরীর গলায় ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন।

এজাহারে ইসমত কাদির গামা বলেন, তিনি স্ত্রীর শোবার ঘরের স্টিলের আলমারির ঢাকনা খোলা, বিছানার ওপর পার্স ও ভ্যানিটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন। তার চিৎকারে প্রতিবেশী একজন চিকিৎসক সেখানে উপস্থিত হয়ে মাহফুজা মারা গেছেন বলে জানান। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে।

গাড়িচালক সুজন শেখের বরাত দিয়ে ইসমত কাদির গামা এজাহারে উল্লেখ করেন, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গাড়িচালক সুজন শেখ তার স্ত্রীর কাছ থেকে মাসিক বেতনের টাকা নিয়েছেন। এ থেকে তিনি ধারণা করছেন, বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে দুই গৃহকর্মী তার স্ত্রীকে হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এজাহারে তিনি আনুমানিক ২০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল খোয়া যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

দুই গৃহকর্মী কারা?

মামলার এজাহার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দুই গৃহকর্মীর রুমা ওরফে রেশমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানাধীন মজিরদি এলাকায়। তার বাবার নাম আব্দুর রশিদ। গত ৪ জানুয়ারি থেকে সে নিহত মাহফুজা চৌধুরীর বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে। এছাড়া অপর গৃহকর্মী স্বপ্নার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা থানাধীন রায়কুটি এলাকায়। তার বাবার নাম আব্দুল করিম। গত ১৮ জানুয়ারি সে মাহফুজা চৌধুরীর বাসায় কাজে যোগ দেয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, এই দুই গৃহকর্মীকে নিহত মাহফুজা চৌধুরীর বাসায় কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছিল রাকিবের মা ওরফে রুনু নামে এক নারী। ঘটনার পর থেকে তাকেও পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে মামলার এজাহারে সন্দেহভাজন হিসেবে তার নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর দুই গৃহকর্মীকে গ্রেফতারের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরাও অভিযান চালাচ্ছে। র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক  লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিষয়টির ছায়া তদন্ত করছি। দুই গৃহকর্মীকে গ্রেফতারের জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিসি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) রাজীব আল মাসুদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনও আপডেট নেই। আমরা দুই গৃহকর্মীকে ধরার চেষ্টা করছি।’

উল্লেখ্য, নিহত মাহফুজা চৌধুরী পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। সর্বশেষ তিনি সরকারি ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার স্বামী ইসমত কাদির গামা মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, ডাকসুর সাবেক জিএস ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি এলাকায়।