দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষা’ শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেন আলোচকরা। মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় বাংলা ট্রিবিউনের সাপ্তাহিক এই আয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেদের মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। সেখানে আমাদের আশেপাশে অন্যান্য জাতিসত্তার লোক আছে, তাদের ভাষাকে কীভাবে গুরুত্ব দেবো? আমরা কি সাঁওতাল ভাষাকে গুরুত্ব দেবো? অথচ সাঁওতালরা এদেশের আদি সন্তান। একথা আমরা ভুলে যাই। তাদেরকে কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখি, সেটি করা মোটেও উচিত নয়। আমরা যদি মনে করি, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠালেই আমার সন্তানেরা মানুষ হবে, গুণী হবে, জ্ঞানী হবে– তাহলে আমরা মূর্খের স্বর্গে বাস করি। আমাদের সমাজ ভাষা সম্পর্কে সচেতন নয়, তাদের বাধ্য করতে হবে ভাষা সম্পর্কে সচেতন হতে। শিক্ষার্থীদের যদি ভাষা সম্পর্কে সচেতন না করেন তাহলে ভাষা কখনও উন্নতির পথে যাবে না।’
এ সময় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘হয়তো আরও পাঁচ বছর পর এই কথাগুলো আমি আরও শক্তি নিয়ে বলতে পারবো যদি আমাদের অর্থনীতি একটি অবস্থানে পৌঁছে যায়, পৃথিবী আমাদের গণ্য করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত হিসেবে। যেমন– আমরা এখন দুর্নীতির তলানিতে আছি। যদি দুর্নীতির সূচকে আমরা উপরে উঠে উন্নত অবস্থানে যাই, আমাদের নারীদের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। যদি এভাবে আমাদের সক্ষমতাগুলো স্থানান্তর করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের একটা মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হবে। আমাদের শান্তিরক্ষা বাহিনীর কারণে সেনেগালে বাংলা ভাষার একটি মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্তঃসম্পর্কগুলো অনেক বিস্তৃত করতে হবে। আমাদের কর্মকাণ্ডগুলো আরও বিস্তৃত করতে হবে। আমাদের সাহিত্যের অঞ্চলটিকে অনেক শক্তিশালী করতে হবে। বাংলা একাডেমি যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তার একটি ছিল, তর্জমার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে দেওয়া। সেই কাজটি আমরা হাতে নিতে পারিনি। সেই কাজটি যদি করতে পারি, তাহলে আমি মনে করি বাংলা সাহিত্য দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের কি উদ্যোগ নেওয়ার সময় আসেনি? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষা শেখানোর জন্য মিশন করুন। শুধু বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে নয়, আলাদা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করা যায়। সেই সামর্থ্য বাংলাদেশের ধীরে ধীরে হবে। আমাদের প্রথম দরকার, বিদেশের কাছে নিজেদের নৈতিকভাবে তুলে ধরা।’
তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের বিদেশে বাংলা ভাষা শেখানোর জন্য কেন্দ্র খোলার মতো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এখনও হয়নি। একটি বিষয়ে জুলফিকার রাসেল ভালো বলেছেন– আমরা যখন বেড়ে উঠেছি, তখন ওপার বাংলার সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, গৌতম ঘোষের সিনেমাগুলোতে সাব টাইটেল দেখতাম। তখন ভালো লাগতো যে, বাংলা ভাষা সাব টাইটেলে যাচ্ছে। আজকে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করার মতো চলচ্চিত্র কয়টি আছে?’
ঢাকা লিট ফেস্টে ইংরেজি ভাষাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়– অদিতি ফাল্গুনীর এমন মন্তব্যের জবাবে জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘ঢাকা লিট ফেস্টে যারা একটু বেশি ইংরেজি জানেন তাদের একটু বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফেস্টে বিদেশি অতিথি যারা আসেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্যই মূলত ইংরেজিকে এই প্রাধান্য দেওয়া। কারণ, বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের সঙ্গে পরিচিত করতে এ ধরনের একটি আয়োজন আমাদের দরকার আছে। পাশাপাশি দেখবেন, লিট ফেস্টে বাংলা ভাষায় যে-কয়টি সেশন রয়েছে, পৃথিবীর আর কোনও দেশের কোনও ফেস্টে নিজের ভাষায় এতগুলো সেশন নেই।’