বাংলা ট্রিবিউনকে ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত অক্টোবরে ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন। তবে অনেক কাজ এখনও রয়ে গেছে। আমাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতিগুলো আগে দেখতে হয়, প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন করা লাগে। তারপর যন্ত্রগুলো বুঝে নিতে হয়। আমাদের টিমের সবাই যন্ত্রপাতিগুলো দেখেছেন। তবে আমাদের এখানে বিদ্যুৎ নিয়ে জটিলতা ছিল। সিটি করপোরেশন এবং ডিপিডিসি মিলে এই জটিলতা দূর করেছে। এখন বিদ্যুতের লাইন সংযোগের কাজ চলছে। আগামী ১-২ মাসের মধ্যে সংযোগ পাওয়া যাবে বলে আশা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার পর ইনস্টিটিউটের জন্য আনা যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা হবে, সেগুলো ঠিক আছে কিনা। এরপর জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইনস্টিটিউটে প্রায় ৪০০ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে। চিকিৎসকদের পদায়ন করা হবে। অন্য যায়গা থেকে তাদের নিতে হবে। এছাড়া, হাসপাতাল পাহারা দেওয়ার জন্য পাহারাদারও লাগবে। এগুলো নিয়ে আমরা নিয়মিত মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছি। সব কিছুতেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। তাই সময় একটু বেশি লাগছে।’
এদিকে বার্ন ইনস্টিটিউটের বিদ্যুৎ সংযোগ এবং এ বিষয়ে সার্বিক তদারকি করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাকিল আহমেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ইনস্টিটিউটের জন্য ৪ দশমিক ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য লাইন সংযোগ দেওয়া হবে। ’
বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) বিদ্যুতের সংযোগ দিচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী তারা আমাদের সবচেয়ে কাছের ভেন্যু থেকে লাইন দেওয়ার কথা, যেটি ঢাকা মেডিক্যালের কাছে অবস্থিত। তবে ওই ভেন্যু অর্থাৎ ঢাকা মেডিক্যাল সাব-স্টেশনটি তারা এখনও ফাংশনাল করতে পারেনি। তারা ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে এসেছে। কিন্তু ভেন্যু পর্যন্ত এখনও পৌঁছাতে পারেনি। এই ভেন্যু পর্যন্ত লাইন আসবে ১৩২ কিলোভোল্টেজের (কেভি)। সেখান থেকে তারা আমাদেরকে ৩৩ কেভির একটি সংযোগ দেবে। তারপর আমরা বিদ্যুৎ পাবো। ’
সময়ক্ষেপণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই বিদ্যুৎ সংযোগ কার্যক্রম কতদিন লাগবে এটা ডিপিডিসির এখতিয়ার। তাদের ঠিকাদাররা কাজ করছে। এতে ঠিক কতদিন লাগবে, সে বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন। যেহেতু প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর নামে, আমার বিশ্বাস যত দ্রুত সম্ভব তারা করে দেবেন।’
বার্ন ইনস্টিটিউটে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবার পরের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের লাইন মেইন গেট পর্যন্ত আসবে। পরে মেশিন ও লিফট যে প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সরবরাহ করছে তারাই পরীক্ষা করে ঠিক করে দেবেন। ইনস্টিটিউটে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেশিনগুলো চালানো হবে।’
ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজ করছি। সবমিলিয়ে এখানে বিদ্যুতের লোড হবে ৫-৭ মেগাওয়াট। কিন্তু এখন কাজ কিছুদিন বন্ধ থাকবে। কারণ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনার এলাকায় মানুষের চলাচলের কারণে কাজে কিছুটা ভাটা পড়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি পার হলে আবারও কাজ শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৩২ কেভি থেকে ঢাকা মেডিক্যালের সাব স্টেশনে সংযোগ দেওয়া হবে। সেখান থেকে ৩৩ কেভি লাইনের মাধ্যমে বার্ন ইনস্টিটিউটকে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে।’
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা সম্পন্ন ১৭ তলা ভবন নির্মাণে ব্যয় ৯১২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২৯ জুন থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই ইনস্টিটিউট তৈরির কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৬ লাখ ৬২ হাজার স্কয়্যার ফুট আয়তনের এই ইনস্টিটিউটটি বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি এই দুই ইউনিটে বিভক্ত। এর একেকটা ফ্লোরের আয়তন ৩৬ হাজার স্কয়্যার ফুট। ১৬টি লিফট ও পাঁচটি সিঁড়ি থাকছে এই ১৭ তলা ভবনে। ২৪টি ডাবল বেডের কেবিন এবং ২৮টি সিঙ্গেল বেডের কেবিনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। শয্যা সংখ্যা ৫০০। এই ইনস্টিটিউটে একসঙ্গে ১০ জন রোগীর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকবে। আর দূরের রোগীদের সরাসরি ইনস্টিটিউটে আসার সুবিধার জন্য ছাদে থাকবে হেলিপ্যাডও।
ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ এই ইনস্টিটিউটকে আগুনে পুড়ে যাওয়াদের চিকিৎসার জন্য বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে চাই।’