এক বছরের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরলেন মেয়র আতিকুল

সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘নগরীকে সুন্দর ও আলোকিত করার অনেক পরিকল্পনা আমার আছে। মেয়র হিসেবে আগামী এক বছর আমার লক্ষ্যগুলো তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি।’
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর শনিবার (২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে উত্তরার ৪ নং সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কে বাংলাদেশ ক্লাবে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আগামী এক বছরের জন্য মেয়রের কাজের পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে আলোকিত ঢাকায় পরিণত করা
২. পরিবেশ দূষণ রোধ করা
৩. প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে নগর অ্যাপসকে সক্রিয় করা
৪. সব ধরনের কর ও লেনদেনকে ডিজিটাইজড ও অটোমেশন করা
৫. বৃক্ষরোপণ, নগর বনায়ন, নগর কৃষির বিস্তার ও বিকাশ
৬. মহল্লায় মহল্লায় উন্মুক্ত পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরি
৭. ফুটপাত নাগরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া
৮. সড়ক নিরাপত্তা ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা
৯. নতুন অন্তর্ভুক্ত এলাকায় উন্নয়ন পরিকল্পনা
১০. প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের শুরু করা কাজগুলোকে সম্পন্ন করতে সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ।


সংবাদ সম্মেলনে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে এই বিজয় শুধু আমার নয়, নগরবাসীরও। এই জয় ঢাকার নতুন দিনের পথচলার প্রথম পদক্ষেপ। আমাদের গন্তব্য একটাই- একটি সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয়।’
উন্নয়ন কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার প্রথম শর্ত আধুনিক ঢাকা গড়তে সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত, নাগরিক হিসেবে সবার যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি দায়বদ্ধতাও রয়েছে। এই দায়বদ্ধতাকে ভালোবাসায় রূপান্তর করতে হবে। তৃতীয় শর্ত, উন্নয়নের যাত্রায় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বশীলদের সমন্বয় প্রয়োজন। দল মত নির্বিশেষে সকল রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সমাজের সবাইকে পাশে দরকার।
তিনি বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড সংযুক্ত হয়েছে। এগুলোকে উন্নত করার লক্ষ্যে সকলকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। ছোট ছোট লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে না পারলে বড় বিজয়গুলো আমাদের হাতের নাগালের বাইরে রয়ে যাবে।
নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শুধু আমার শহর নয়, এই শহর আপনাদেরও। আমাদের সবার সামান্য সচেতনতা ও সহযোগিতা নগরীর উন্নয়নের জন্য দরকার। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যে যার জায়গা থেকে ন্যূনতম সহযোগিতা করলেই ঢাকাকে সুন্দর, সচল ও আধুনিক শহরে পরিণত করতে পারবো।’
তিনি বলেন, আপনারা প্লাস্টিকের পানির বোতল রাস্তায় ছুড়ে না ফেলে ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন। আামাদের একটু সচেতনতা অনেকখানি বদলে দেবে বর্ষাকালীন জলাবদ্ধতার সমস্যা। ছোট ছোট নাগরিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়ে আমরা বড় বড় অর্জন ছিনিয়ে আনতে পারি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নতুন ১৮ ওয়ার্ডে রাস্তাঘাট খুব সরু। আপনারা কিছু কিছু জায়গা ছাড়লে সেখানেও প্রশস্ত রাস্তা করা সম্ভব। আমরা একটি প্ল্যানের মধ্যে এই ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন করতে চাই।
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক নগরীর দখল করা ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করেছিলেন। কিন্তু সেগুলো আবারও দখল হয়ে গেছে। সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব কাজ করছে। আপনি কি রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে কাজ করতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে নাগরির উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। সকলের সমন্বয়ে আমরা সড়কের ফুটপাত ও দখল করা জায়গা উচ্ছেদ করে নগরবাসীর সুবিধায় কাজে লাগাবো।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বাড়ছে জনদুর্ভোগ- এর প্রতিকার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সব সংস্থাকে অনুরোধ করবো, কোনও উন্নয়নমূলক কাজের কারণে যাতে জনদুর্ভোগ না হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
মশা নিধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মশা নিধন কার্যক্রম শুরু হবে। মশা শটটার্ম, মিডটার্ম ও লংটার্মের কোনও টার্মেই পড়ে না। এর কোনও শেষ নেই। তাই আমরা বিভিন্ন জায়গায় মশা নিধনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবো।
আপনার দেওয়া কর্মপরিকল্পনা শেষ করতে এক বছর কি পর্যাপ্ত? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করছি। উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু হলে এটি শেষও হবে। এই এক বছর কি আপনার আগামী ৫ বছরের জন্য ইনভেস্টমেন্ট- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের সেবক হিসেবে থাকতে চাই। আমি কাজ করে যাবো। কোনও প্রকার ইনভেস্টমেন্টের কথা ভাবছি না। জনগণের সমর্থন নিয়ে মেয়র হয়েছে। আগে কাজ করি, পরে জনগণই তাদের সমর্থনের বিষয় জানাবে।
তিনি নগরীর সব জায়গা থেকে নির্বাচনি পোস্টার দ্রুত সরানোর জন্য জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, উত্তর সিটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে বিভিন্ন জায়গায় থাকা নির্বাচনি পোস্টার সরিয়ে ফেলতে ইতোমধ্যে আমাদের একটি টিম মাঠে কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি তারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাজনীতি করার চেষ্টা করি। ঢাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন মেয়রকে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করবো। আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানার সকল নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।