জাহালমের ঘটনায় দুদকের দায় নেই?

জাহালম ওরফে জানে আলমসোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় নিরপরাধ জাহালমকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নয় কর্মকর্তা।

তবে দুদক দাবি করেছে, জাহালমের ঘটনায় তাদের দায় নেই। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) হাইকোর্টে এমন প্রতিবেদনই জমা দিয়েছে দুদক। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সঙ্গে জড়িতরা এ ঘটনায় জড়িত বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

দুদক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের নথির ওপর ভিত্তি করেই ঋণ দেওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তাদের এ ঘটনায় কোনও দায় নেই। মঙ্গলবার হাইকোর্টে হলফনামা আকারে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইউসিবিএল ও সিটি ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী।
বুধবার (৬ মার্চ) উচ্চ আদালতের একটি দ্বৈতবেঞ্চে এই মামলার রুল শুনানি হবে।
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘কে দায়ী তা শুনানির পর ঠিক করবেন আদালত।’
প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা দায়ের করে দুদক। এই অভিযোগে দুদক কার্যালয়ে হাজির হওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি যায় জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়। চিঠি পেয়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে জাহালম জানান, তিনি মামলার আসামি সালেক নন, তার নাম জাহালম। এ সময় জাহালম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে সেদিন নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কথা কেউ বিশ্বাস করেননি। দুদকের ভুলে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আসামি সালেকের বদলে গ্রেফতার হন জাহালম। এরপর দুদকের এসব মামলায় সালেকের বদলে জাহালমকে তিন বছর কারাগারে থাকতে হয়। কারাবন্দি জাহালম অনেকবার আদালতে হাজিরা দিলেও জামিন মেলেনি।
এদিকে, দুদকের দায়ের করা ৩৩টি মামলার মধ্যে ২৬টি মামলায় জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এসব মামলায় বিচারিক আদালতে বিচারও শুরু হয়।
দুদকের মামলায় প্রকৃত আসামি আবু সালেকের বদলে নির্দোষ শ্রমিক জাহালম কারাগারে বন্দি থাকার বিষয়টি গত ৩০ জানুয়ারি বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনা হয়। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমকে দুদকের ২৬টি মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। ওই রাতেই কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম ওরফে জানে আলম।

জাহালমের মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও বিদেশে প্রশিক্ষণ:

প্রকৃত আসামি আবু সালেকের বদলে নির্দোষ শ্রমিক জাহালমকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করেন দুদকের নয় কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তাদের আটজনই রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। পদোন্নতিও পেয়েছেন তারা। অন্যজন প্রশিক্ষণের জন্য বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় অবস্থান করছেন।