বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

রাজন কর্মকারের মামা সুজন কর্মকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেনবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক রাজন কর্মকারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাতে পরিবারের সদস্যরা তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্ত্রীর সঙ্গে ইন্দিরা রোডের একটি বাসায় থাকতেন তিনি। রাজন কর্মকারকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি বিএসএমএমইউ’র ম্যাক্সিলোফেসিয়াল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন।   

নিহতের স্বজনরা জানান, শনিবার (১৭ মার্চ) গ্রিন লাইফ হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শেষে রাত ১২ টায় বাসায় ফেরেন ডা. রাজন। রাত সাড়ে ৩টায় নিহতের মাকে ফোন করে তার স্ত্রী কৃষ্ণা মজুমদার জানান, রাজনের অবস্থা ভালো না। পরে তারা জানতে পারেন রাজনকে রাতে স্কয়ার হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত চিকিৎসকের স্ত্রী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের মেয়ে।

নিহতের চাচাত ভাই অভি বলেন, ‘রাজন ভাইয়ের সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। এর আগে একাধিকবার তাকে মারধর করা হয়েছিল। এ জন্য আমাদের সন্দেহ তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। আমরা তার লাশের ময়নাতদন্ত করাতে চাই।’

চিকিৎসক রাজন কর্মকারের মামা সুজন কর্মকার বলেন, ‘আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। লাশের ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। এর জন্য যা যা করা প্রয়োজন, আমরা তা করবো।’ মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি, এখনও মামলা করিনি।’

রাতে কৃষ্ণা রাজনের মাকে ফোন করে কী বলেছিল জানতে চাইলে মামা সুজন কর্মকার বলেন, ‘রাতে রাজনের স্ত্রী কৃষ্ণা আমার বোনকে ফোনে বলেছে, আপনার ছেলে মারা গেছে, আমি আপনাদের দেখে নেবো, নিজেও সুইসাইড করবো। আপনাদের শান্তিতে থাকতে দেবো না। আমাকে আমার বোন (রাজনের মা) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, রাজন মারা গেছে। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমি হাসপাতালে ছুটে আসি।’

রাজনের সহকর্মী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলোজি বিভাগের চিকিৎসক শাহ নেওয়াজ বারী জানান, এখন আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। কারণ, এর আগেও এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে সহকর্মীরা সবাই ছুটে এসেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

বিএসএমএমইউ’র ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি (ওএমএস) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কাজী বিল্লুর রহমান বলেন, ‘রাজনের পরিবার লাশের ময়নাতদন্ত চায়। সেক্ষেত্রে কারও কোনও আপত্তি নেই। আমি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, ময়নাতদন্তে তাদের কোনও আপত্তি নেই। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউ’র সব চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা এখানে এসেছেন। সবার দাবি, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’

লাশ দেখে প্রাথমিকভাবে কী মনে হয়েছে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি রাতে খবর পেয়ে এখানে ছুটে এসেছি। আমি এসে শুধু রাজনের মুখ দেখেছি, শরীরের আর কিছু দেখিনি। আমার দেখে স্বাভাবিক মনে হয়েছে।’

বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি রাজন কর্মকারের মৃত্যুর খবরটি শুনেছি। তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। আমার এখানে তার বাবা ও মামা এসেছিলেন। তার বাবা অভিযোগ করেছেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তারা মৃতদেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের একজন চিকিৎসক মারা গেছেন। আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে মনে করি, তার মরদেহের ময়নাতদন্ত হওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাত ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে ডা. রাজনকে আমাদের এখানে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। এরপর আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করি। এখানে নিয়ে আসার পর আমরা তার লাইফের কোনও সাইন পাইনি। ইসিজি করা হয়, সেটি স্ট্রেট লাইন ছিল। তার বডিতে কোনও ইনজুরি ছিল না। তার হার্ট ব্লক হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবারকে ডেডবডি দিয়ে দিতে আমরা প্রসেস করেছি, ময়নাতদন্তের জন্য বলিনি। তবে পরিবার যদি চায়, তাহলে ময়নাতদন্ত করবে। ’

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সি বলেন, ‘আমরা একজন চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়েছি। নিহতের স্বজনেরা অভিযোগ করলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।