ক্ষতিপূরণ না দিলে গ্রিন লাইনের টিকিট বিক্রি বন্ধ




স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে আদালতে চালক ফারুক১০ এপ্রিলের মধ্যে প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ না দিলে ১১ এপ্রিল থেকে গ্রিন লাইন পরিবহনের সব ধরনের টিকিট বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পরিবহন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. আব্দুস সাত্তারের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা। অন্যদিকে গ্রিন লাইনের পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ।

সকালে মামলার শুনানি নিয়ে আদালত বাসটির মালিককে তলব করেন। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকায় পরিবহন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপককে দুপুর ২টায় তলব করেন হাইকোর্ট। পরে আদালত বাসটির জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুস সাত্তার উপস্থিত হলে তার কাছে বাস মালিকের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান আদালত। জবাবে সাত্তার বলেন, ‘বাসের মালিক মো. আলাউদ্দিন একজন বৃদ্ধ মানুষ। চিকিৎসার জন্য তিনি গত ৩১ মার্চ ভারতে গিয়েছেন।’

তখন আদালত বলেন, ‘আদালতের আদেশের বিষয়ে তাকে অবহিত করেছেন?’ জবাবে সাত্তার বলেন, ‘জ্বি, জানিয়েছি।’ তখন আদালত বলেন, ‘আপনাদের চেক ইস্যু করে কে?’ সাত্তার বলেন, ‘মালিক চেক ইস্যু করেন।’

এরপর গ্রিন লাইন বাস কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মো. অজি উল্লাহকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘মালিক অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে আছেন, অথচ সে বিষয়ে কোনও আবেদন দিয়ে আমাদের বিষয়টি অবহিত করলেন না? আমরা কিন্তু এসব বিষয় সহ্য করবো না। আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা না দিলে সব বাস জব্দ করা হবে। একইসঙ্গে মামলাটি পরবর্তী আদেশের জন্য ১০ এপ্রিল দিন নির্ধারণ রাখা হলো।’

পরিবহনটির ব্যবস্থাপকের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘১০ এপ্রিলের মধ্যে টাকা না দিলে ১১ এপ্রিল থেকে বাসের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখবেন। অযথা টিকিট বিক্রি করে (১০ এপ্রিল থেকে) জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলবেন না।’ এরপর আদালত আগামী ১০ এপ্রিল এ মামলার ক্ষতিপূরণ পরিশোধের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এরআগে, সকালে ক্ষতিপূরণ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। এসময় আদালতের আদেশের পরেও রাসেলকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুই বিচারপতি। তারা বলেন, ‘যত বড় বিজনেস ম্যান হোক না কেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার। ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে গ্রিন লাইন পরিবহনের সব গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। সব গাড়ি সিজ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করে রাসেলকে টাকা দেওয়া হবে।’

লাল শার্ট পরিহিত ব্যক্তি গ্রিন লাইনের ব্যবস্থাপকএসময় পরিবহন প্রতিষ্ঠানটির মালিকের খোঁজ জানতে চান আদালত। জবাবে আইনজীবী অজি উল্লাহ বলেন, ‘মো. আলাউদ্দিন। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন।’ আদালত জানতে চান, ‘কোথায় আছেন এবং কবে আসবেন?’ জবাবে আইনজীবী অজি উল্লাহ বলেন, ‘আমি জানার চেষ্টা করছি।’

পরে আদালত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার মধ্যে গ্রিন লাইনের ব্যবস্থাপককে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। দুপুর ২টার পর এ বিষয়ে পুনরায় শুনানি হয়।

এর আগে গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। একইসঙ্গে রাসেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ।

এরপর গত ৩১ মার্চ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন পরিবহনের করা আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকারচালকের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা।

এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।