বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের মরদেহ দেখতে এসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এসব কথা বলেন।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন বিরোধী কমিটি থাকার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। আমরা বার বার এই কমিটির বিষয়ে বলে আসছি। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দাবি করছি, যৌন হয়রানির জন্য একটা আইন করার। আদালত থেকে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে— যৌন হয়রানির জন্য একটি কঠিন আইন করতে হবে। দ্রুততম সময়ের ভেতরে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সেই জিনিসটা এখনও করতে পারিনি।’
এসময় তনু হত্যার বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বার বার তনুসহ সব ধরনের যৌন নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনার বিচার চেয়ে আসছি। তবে আমরাতো কাউকে গ্রেফতার বা শাস্তি দিতে পারি না। আমরা শুধু বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারি, প্রতীকার চাইতে পারি। আমরা সেগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।’
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান এসময় নুসরাতের বিষয়ে পুলিশের আচরণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রাথমিকভাবে নুসরাতের যে মানবিক মর্যাদাহানি করা হয়েছে, তারও বিচার হওয়া উচিত। থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুধু প্রত্যাহার না, বিষয়টি তদন্ত করে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
এরআগে, বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুসরাত ঢামেকে মৃত্যুবরণ করেন। ঢামেকের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পরে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের হিমঘর থেকে নুসরাতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে নুসরাতের মৃত্যুর ঘটনায় শাহবাগ থানায়েএকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৬০২) করা হয়েছে। নুসরাতের আত্মীয় মোহাম্মদ আলী এ সাধারণ ডায়েরি করেন বলে জানান ডিউটি অফিসার এসআই জাহাঙ্গীর আলম।
গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে বোরকাপরা ৪/৫ ব্যক্তি তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
ওই ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, শনিবার সকালে তার বোনের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি। তবে কেন্দ্রের প্রধান ফটকে নোমানকে আটকে দেন নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা। এরপর তার বোন একাই কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এ সময় নোমান কেন্দ্র থেকে একটু দূরে চলে আসেন। এর ১৫-২০ মিনিট পরই মোবাইল ফোনে তিনি তার বোনের অগ্নিদগ্ধের খবর পান। ফের কেন্দ্রে ছুটে গিয়ে বোনকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তিনি।
উল্লেখ্য, নুসরাত সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা একেএম মানিকের মেয়ে। অভিযোগ আছে, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৗলা এর আগে ওই তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। এ কারণে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা বর্তমানে ফেনী কারাগারে আছেন। এদিকে মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার তিন দিন পর থানায় মামলা হয়। সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকালে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি করেন ভিকটিমের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান। মামলার সংশোধিত এজাহারে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া মুখোশধারী চারজন এবং তাদের সহযোগীদের আসামি করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত মোট আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।