তালাকে সালিসি কাউন্সিলের কার্যকারিতা নিয়ে রুল

হাইকোর্ট

কোরআন এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশনের আলোকে বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তান হেফাজত ও দেনমোহর নির্ধারণে এ সংক্রান্ত সালিসি কাউন্সিলের ভূমিকা নিশ্চিত করতে কেন নীতিমালা করার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া কোরআন ও আইন অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচ নিষ্পত্তির বিষয়ে সালিসি কাউন্সিল কার্যকর করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিচারপতি নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিব (ড্রাফটিং), মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, এলজিআরডি সচিব ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম।
ফাওজিয়া করিম ফিরোজ জানান, ‘১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী তালাক আবেদনের ৯০ দিনের মধ্যে কোনও পক্ষ আপসের বা তালাক প্রত্যাহারের আবেদন না করলে তা কার্যকর হয়ে যায়। তালাক আবেদনের পর সালিসি কাউন্সিল মধ্যস্থতার জন্য ৯০ দিনে তিনবার উভয়পক্ষকে নোটিশ দিয়ে ডাকবেন। কিন্তু কাউন্সিলের এ ডাকে কোনও পক্ষ যদি না আসেন তাহলেও তালাক কার্যকর হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটি কার্যকর হলে তো সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। কিন্তু এর সঙ্গে দেনমোহর, ভরণপোষণ, সন্তান থাকলে তার জিম্মা নেওয়ার বিষয় থাকে। এ কারণে তালাক হয়ে যাওয়ার পরও এ বিষয়গুলো নিয়ে মামলা হয়, যা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই আমরা বলেছি পবিত্র কোরআনের স্পিরিট ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী সালিসি পরিষদ কার্যকর এবং এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন তৈরির নির্দেশনায় রুল জারি করতে। আদালত রুল জারি করেছেন।’
প্রসঙ্গত, ‘ঢাকায় ঘণ্টায় এক তালাক’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদন যুক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে সেক্রেটারি সীমা জহুর ও আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম এ রিট করেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঢাকা শহরে তালাকের আবেদন বাড়ছে। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে তালাকের আবেদন করা হচ্ছে। গত ছয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তালাকের আবেদন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়, যা প্রায় ৭৫ শতাংশ। দক্ষিণ সিটিতে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। দুই সিটিতে আপস হচ্ছে গড়ে ৫ শতাংশের কম।’