এর আগে গত ১৬ এপ্রিল ওই ভবন সিলগালা করে রাজউক। তার আগে ওই দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবন থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেয় রাজউক। এরপর ভবন সিলগালা করা হয়। পরে বিজিএমইএ ও ভবনে থাকা অফিস মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ (১৮ এপ্রিল) দিনভর মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য ফের সময় দেয় রাজউক।
রাজউক সূত্র জানিয়েছে, বিজিএমইএ ভবনে এখনও বিজিএমইএ (বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন), এক্সিম ব্যাংক ও ডিবিএল গ্রুপের চারটি ফ্লোরে মালামাল রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আবারও মালামাল সরিয়ে নিতে সুযোগ দেয় রাজউক। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও তারা মালামাল সরিয়ে নিতে পারেনি। এখনও যেসব মালামাল রয়েছে সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য যদি তারা রাজউকের কাছে সময় চায় তাহলে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, ‘এখনও অনেক প্রতিষ্ঠানের মালামাল রয়েছে। তবে কী পরিমাণ রয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের মালামাল রয়েছে তারা যদি রাজউকের কাছে আবেদন করে তাহলে রাজউক বিবেচনা করবে।’
বিজিএমইএ ভবনে থাকা ডিবিএল গ্রুপের কর্মকর্তারা বলেন, ‘আজকের মধ্যেই আমাদের সব মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু সব বের করা সম্ভব হয়নি। আমরা রাজউকের কাছে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করবো।’
উল্লেখ্য, রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবন ভাঙা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় প্রায় ৯ বছর আগে। ২০১০ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ভবনটি নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে ভবনটি কেন ভাঙা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন আদালত। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ভবনটি ভেঙে ফেলার রায় দেন। ওই রায়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণ করা জমি ১৯৯৮ সালে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো যেভাবে বিজিএমইএ’কে দিয়েছে তা বেআইনি বলে উল্লেখ করা হয় এবং রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জলাধার আইন ভঙ্গ করে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে ‘একটি ক্যানসার’ বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আপিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজিএমইএ’র ওই আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। পরে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ আপিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা বিজিএমইএ’র আবেদনটিও খারিজ হয়ে যায়। এরপরও ভবন না ভাঙতে আদালতের কাছে বারবার সময় চান বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল মুচলেকা দিয়ে ভবন ভাঙতে এক বছর সময় পান বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। গত ১২ এপ্রিল এ সময় পার হওয়ায় মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
আরও পড়ুন: বিজিএমইএ ভবন থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে ফের সুযোগ