গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া, প্রচুর পানি খাওয়ার পরামর্শ

হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী

প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। আইসিডিডিআরবি’র জনসংযোগ শাখা জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১২৭৪ জন। তীব্র গরম থেকে রেহাই পেতে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন বেশি করে পানি পানের জন্য। আর রাজধানীর হাসপাতালগুলোর পরিচালকরা জানিয়েছেন, ডায়রিয়ার রোগীদের সেবা দিতে তাদের সক্ষমতা রয়েছে।

ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. আহমেদুল কবির হিমেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন স্যালাইন, পানি ও পানিজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। যারা রোদে অনেকক্ষণ কাজ করেন, তাদের হিটস্ট্রোক হতে পারে। প্রচণ্ড গরমে শরীরের ব্লাড প্রেসার কমে গিয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। গরমের কারণে ভাইরাস জ্বর হচ্ছে। তাই শরীরের ইমিউনিটি রক্ষায় অতিরিক্ত গরমে কাজ করার সময় কিছুটা রেস্ট নেওয়া দরকার।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার ডা. বদরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গরমে আরামদায়ক সুতি কাপড় পরতে হবে। অতিরিক্ত রোদে গেলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। প্রচণ্ড রোদের কারণে শরীরের সোডিয়াম ক্লোরাইড ঘাম হিসেবে বেরিয়ে যায়। তাই, বাইরে হাঁটাচলা করলে স্যালাইন বা শরবত খেয়ে নেওয়া ভালো। তবে বাইরে যে শরবত বিক্রি হয়, সেগুলো এভয়েড করা ভালো। কারণ, এ মুহূর্তে ঢাকায় প্রচুর মানুষের হেপাটাইটিস বি ধরা পড়ছে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্ট্যাটিসটিকসে এখনও গরমজনিত কারণে রোগী বাড়ার মতো কিছু পাইনি। তবে, আইসিডিডিআরবি’তে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে এটা শুনেছি।’
বিএসএমএমইউ’র পরিচালক (হাসপাতাল) এ কে মাহবুবুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে গরমজনিত রোগী বাড়ার কথা এখনও শুনিনি। এখানে তো সার্বক্ষণিক ইমার্জেন্সি সার্ভিস চালু নেই। আড়াইটা পর্যন্ত যেসব রোগী আসে, তাদের সবাইকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আড়াইটার পর যদি রোগী আসে, সেক্ষেত্রে চারটি ডিপার্টমেন্ট ছাড়া অন্য রোগীদের অন্য মেডিক্যালে যেতে হবে।’
রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের পরিচালক ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট গরমে হওয়ার কথা না। এটা শীতকালের রোগ, কিন্তু এখন শ্বাসকষ্টের রোগী দেখা যাচ্ছে। তারা এলে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। গরমজনিত রোগ মোকাবিলার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ওরস্যালাইন এবং অন্যান্য ওষুধ মজুত আছে।’

আইসিডিডিআরবি’র জনসংযোগ শাখা থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে জানানো হয়, গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বেশি। ২০ এপ্রিল ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিল ৮৭২ জন, ২১ এপ্রিল ছিল ৭৬৮, ২২ এপ্রিল ৮৮৯, ২৩ এপ্রিল ৮৬০, ২৪ এপ্রিল ৮৪৯, ২৫ এপ্রিল ৭৮৬, ২৬ এপ্রিল ৭৫২, ২৭ এপ্রিল ৭৪৮ ও ২৮ এপ্রিল ৬৯২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১২৭৪ জন। নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, রাঙামাটি, পাবনা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও ফেনীসহ মোট ১৯টি জেলা থেকে এই তথ্য এসেছে। দেখা যাচ্ছে— সারাদেশে ২৮ এপ্রিল ১১৩৪ জন, ২৭ এপ্রিল ১০৯৮, ২৬ এপ্রিল ১৩৭৫, ২৫ এপ্রিল ১৪২০, ২৪ এপ্রিল ১১০৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে ডায়রিয়ায় কারও মৃত্যুর তথ্য পায়নি স্বাস্থ্য অধিদফতর।